আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ৮ জন।
আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনের বর্তমান সাংসদ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের কন্যা ডা. জাকিয়া নূর লিপি। জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে কিশোরগঞ্জ-১ (সদর -হোসেনপুর) আসনটি অধিক গুরুত্ব বহন করে। এ আসনটি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। তবে এ আসনে একক নির্বাচন করতে চায় জাতীয় পার্টি।
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা বলছেন, সদর আসনসহ ছয়টি আসনই ধরে রাখতে কাজ করছে জেলা আওয়ামী লীগ। সে অনুযায়ী জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটিগুলোকে ঢেলে সাজানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ-১ আসনে পাচঁবারের জাতীয় সংসদ সদস্য সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এ আসন থেকে সৈয়দ আশরাফ টানা পাচঁ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে সাবেক কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের (সদর) সঙ্গে হোসেনপুর উপজেলা যুক্ত করে নতুন করে কিশোরগঞ্জ-১ আসন বিন্যস্ত করা হয়। এর আগে হোসেনপুর উপজেলা পাকুন্দিয়া উপজেলার সঙ্গে যুক্ত ছিল। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৩০ হাজার ৮৪ জন।
জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে কিশোরগঞ্জ-১ আসনটি গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাধীনতার পর প্রথম সংসদ নির্বাচনে সদর থেকে নির্বাচিত হন। সংসদীয় নির্বাচনী ইতিহাস থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার পর এগারটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সাতবার, বিএনপি তিনবার ও জাতীয় পার্টি একবার এই আসন থেকে বিজয়ী হয়। স্বাধীনতার পর দ্বিতীয় সংসদে ১৯৭৯ সালে বিএনপির ডা. ফজলুল করিম, ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির আলমগীর হোসেন, ১৯৯১ সালে বিএনপির মাওলানা আতাউর রহমান খান, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির মাসুদ হিলালী, একই বছরের ১২ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এবং ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পর পর নির্বাচিত হন।
কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. জাকিয়া নূর লিপি। তিনি এবারো আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চান। তবে তার বড় বাধা আপন ভাই ও আপন চাচাতো ভাইও এই আসন থেকে মনোনয়ন চাওয়ায়। সৈয়দ পরিবার থেকে বর্তমান এমপি ডা. জাকিয়া নূর লিপি ছাড়াও মনোনয়ন চান জাকিয়া নূর লিপির আপন ভাই মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলাম ও আপন চাচাতো ভাই জেলা আ. লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু। একই পরিবারের মধ্যে তিনজন মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি কৃষিবিদ মসিউর রহমান হুমায়ুন।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত সৈয়দ আশরাফ থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলে তার সাথে আওয়ামী লীগের বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয় মসিউর রহমান হুমায়ুনকে। মসিউর রহমান হুমায়ূন ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে তার রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ। তা ছাড়া অসহায় হতদরিদ্র রোগীদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের চেক প্রদানে তার রয়েছে সুখ্যাতি। এ আসনে এছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন জেলা আ. লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ শাফায়াতুল ইসলাম, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পৌর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ শরীফ আহমেদ সাদী, সাবেক রাষ্ট্রপতি পূত্র রাসেল আহমেদ তুহিন ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের ডিজিটাল আর্কাইভ ও পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক প্রিন্সিপাল এম এ হান্নান। এছাড়াও মনোনয়ন চেয়ে ফরম সংগ্রহ করেছেন লতিফাবাদ ইউনিয়ন আ. লীগের সদস্য আসাদুজ্জামান টিপু।
২০১৯ সালে উপ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রথমবার ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর দলে বিভাজন দেখা দেয়। ফলে এবার জল্পনাকল্পনা চলছে নৌকার প্রার্থী কে হচ্ছেন? অবশ্য সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলের কাছে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে এরই মধ্যে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন।
মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি কৃষিবিদ মসিউর রহমান হুমায়ুন বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবত আমরা মাঠে আছি। সাধারণ জনগণসহ দলীয় নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর রাখছি। সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য সহযোগীতা করছি। দল আমাকে মূল্যায়ন করবে এই প্রত্যাশা করি। দল আমাকে নৌকা দেবে বলে আশা করি, আমি নমিনেশন পেলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো।’
মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রিন্সিপাল এমএ হান্নান বলেন, আমি আওয়ামী লীগের ঘরের আওয়ামী লীগ। আমি দীর্ঘদিন যাবত মাঠে কাজ করছি। ভোটের মাঠের একটি অংশ আমাকে চায়। তাই আমি নমিনেশন পেলে বিজয়ী হবো। তবে শেষ পর্যন্ত যিনি নৌকা পাবেন, তাঁর পক্ষে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
এআরএস