১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা পাকিস্তানের হানাদার ও রাজাকার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয়েছিল। তাই আজ ১১ ডিসেম্বর নান্দাইল মুক্ত দিবস তথা শহিদ দিবস। নানা কর্মসূচি উদযাপনের মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা ও সুশীল সমাজের প্রবীণ ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় নান্দাইল থানা কার্যালয় ও এর আশপাশে ছিল রাজাকার ও পাক-হানাদারদের ঘাঁটি। সেখানে অবস্থান করেই তারা যুদ্ধ পরিচালনা করত। তাই থানায় আক্রমণ করে সেখান থেকে তাদের বিতাড়িত করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিকল্পনার বিষয়টি দালালদের মাধ্যমে আগেই পৌঁছে যায় ঘাতক বাহিনীর আস্তানায়। বিষয়টি না বুঝেই মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ১৭ নভেম্বর রাতে নান্দাইল থানায় আক্রমণ চালায়। ঘাতক বাহিনীর ভারি অস্ত্রের সামনে ৪ ঘণ্টা যুদ্ধের পর পিছু হঠতে বাধ্য হন মুক্তিযোদ্ধারা।
কিন্তু এ যুদ্ধে শহীদ হন নান্দাইলের মুক্তিযোদ্ধা শামছুল হক ও ইলিয়াস উদ্দিন। এরপর দিন থেকে রাজাকার, আল-বদর ও পাক হানাদার বাহিনীর অত্যাচারের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ১০ ডিসেম্বর গভীর রাতে নান্দাইল থানার উত্তর দিক খোলা রেখে অন্য তিনদিকে অবস্থান গ্রহণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। আত্মসমর্পণ না করলে তুমুল আক্রমণ শুরু হবে বলে ঘোষণা দেন তারা (মুক্তিযোদ্ধারা)। এ ঘোষণা শুনে পাকবাহিনীসহ রাজাকার-আলবদররা রাতেই উত্তর দিকের সড়ক দিয়ে আঠারোবাড়ির দিকে পালিয়ে যায়।
এরপর মুক্তিযোদ্ধা ফারুকের নেতৃত্বে কাইয়ুম, ওসমান, নূরুল ইসলাম, ফজলু ও সাহেদসহ মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল নান্দাইল থানায় প্রবেশ করে। তখন থানায় থাকা সুবেদার তাহেরের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনীর একটি দল আত্মসমর্পণ করে। এরপর রাত ২টায় মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। ১০ ডিসেম্বর গভীর রাতে থানা মুক্ত হবার কারণে ১১ ডিসেম্বর দিনটিকে নান্দাইলের শহীদ হিসেবে গণ্য করা হয়।
নান্দাইল উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. মাজহারুল হক ফকির বলেন, ১১ ডিসেম্বর দিনটি নান্দাইলবাসীর জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও স্মরণীয় দিন। পাশাপাশি এ দিনটি আমাদের জন্য আনন্দের দিন। আমি এ বিজয় মাসে সকল শহিদদের জন্য মাগফেরাত কামনা করি।
এআরএস