ইটভাটার শ্রমিককে শিকলে বেঁধে নির্যাতনে হত্যার অভিযোগ

বরগুনা প্রতিনিধি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩, ০৯:৩২ পিএম

ইটভাটার সরদার ছালাম চৌকিদার ও তার সহযোগীদের শ্রমিক আনিস গাজীকে (৫৫) লোহার শিকলে বেঁধে নির্যাতনে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহতের স্ত্রী ফিরোজা বেগম এমন অভিযোগ করেন। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের কালিবাড়ী এলাকার আইএসএসবি ইটভাটায় রোববার বেলা ১১ টার দিকে। খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (আমতলী সার্কেল) রুহুল আমিন ও ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

জানাগেছে, উপজেলা ডালাচারা গ্রামের চাঁন গাজীর ছেলে আনিস গাজী গত আগষ্ট মাসে কালিবাড়ী এলাকায় আইএসএসবি ইট ভাটায় কাজ করতে ইটভাটার সরদার ছালাম চৌকিদারের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা দাদন নেয়। গত একমাস আগে ভাটায় কাজ যোগ দেন তিনি। ১৫ দিন কাজ করে আনিস পালিয়ে যায়। স্ত্রী ফিরোজার অভিযোগ ভাটার কাজ করার সময় সরদার ছালাম ও তার লোকজন তার স্বামীকে মারধর করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে তিনটায় ভাটার সরদার ছালাম গাজী, খালেক ও সবুজ  শ্রমিক আনিস  গাজীকে তার বাড়ী ডালাচারা থেকে তুলে আনে। পরে তাকে ইটভাটার একটি কক্ষে লোহার শিকল গিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন করেছে বলে আরো অভিযোগ করেন স্ত্রী ফিরোজা বেগম ও শিশুপুত্র শাহা গাজী (৮)। ইটভাটার সরদার ছালাম চৌকিদার ও তার সহযোগীদের নির্যাতনে শ্রমিক আনিস গাজী বরিবার বেলা ১১ টার দিকে মারা যায়।

খবর পেয়ে স্বজনরা ঘটনাস্থলে এলে ইটভাটার সরদার ছালাম চৌকিদার ও তার সহযোগীরা মরদেহ লুকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু স্বজন ও স্থানীয়দের বাঁধার মুখে  আনিসের মরদেহ লুকাতে ভাটার লোকজন ব্যর্থ হয়। খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার রুহুল আমিন ও ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশ শ্রমিক খালেক মিয়ার কক্ষ থেকে লোহার শিকল উদ্ধার করেছে।

এ ঘটনায় সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য  নাসিমা বেগমের ছোট ছেলে রাকিবকে পুলিশ হেফাজতে আনা হয়েছে। এ ঘটনার পরপর ওই ইটভাটার সকল শ্রমিক পালিয়েছে। পুলিশ ওইদিন বিকেলে মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে প্রেরন করেছে।

নিহতের স্ত্রী ফিরোজা বেগম বলেন, গত বৃহস্পতিবার  রাত সাড়ে তিনটায় ইটভাটার সরদার ছালাম চৌকিদার, সবুজ ও খালেক আমার স্বামীকে বাড়ী থেকে তুলে আনে। পরের দিন শুক্রবার দুপুরে আমি এসে দেখি তাকে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। গত তিন দিন আমার স্বামীকে একটি ঘরের মধ্যে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে আটকে রেখে নির্যাতন করেছে।

ঘর থেকে বের হতে দেয়নি। ওই ঘরের মধ্যেই আমার স্বামীকে মলমুত্র ত্যাগ করতে হয়েছে। সরদার ছালাম, সবুজ ও খালেকসহ বেশ কয়েকজন আমার স্বামীকে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। তিনি আরো বলেন, আমার স্বামীকে নির্যাতনে বিষয়টি ইউপি সদস্য নাসিমাকে জানালে তিনি উল্টো আমার সঙ্গে খাবার আচরণ করেছেন। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।

আনিস গাজীর ফুফুতো ভাই আসলাম বলেন, খবর  পেয়ে ইটভাটার এসে দেখি আমার ভাইয়ের মরদেহ লুকানোর জন্য সরদার ছালাম, খালেক ও সবুজসহ ২০-২৫ জন ইটভাটার শ্রমিক গাড়ীতে তুলেছে। আমাদের বাঁধার মুখে মরদেহ সরাতে পারেনি। আমার ভাইকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।

গুলিশাখালী সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য নাসিমা বেগম বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে আমার ছেলের সবুজের মোটর সাইকেলে উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ও ফারুক গাজীর ইটভাটার সরদার ছালাম চৌকিদার ও খালেক শ্রমিক আনিস গাজীকে বাড়ী থেকে তুলে আনে।

পরে ভাটার  একটি কক্ষে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে। গত তিন দিন ধরেই আনিস ওই কক্ষে বাঁধা ছিল। রবিবার বেলা ১১ টার দিকে জানতে পাই তিনি মারা গেছেন। তিনি আরো বলেন, মারা যাওয়ার পরে ইটভাটার সরদার ছালাম চৌকিদার ও তার লোকজন পা থেকে শিকল খুলে পাশের একটি কক্ষে লুকিয়ে রেখেছে।

ইটভাটার মালিক উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান বলেন, ওই ইটভাটা আমি চালাই না। গত বছর ফারুক গাজীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। তবে শুনেছি একজন শ্রমিক নির্যাতনে মারা গেছেন। তবে ওই ইটভাটার পোড়াই মিস্ত্রি সুলতান মিয়া বলেন, উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মজিবুর রহমানের ইটভাটা ফারুক গাজী দেখভাল করেন। 
ফারুক গাজীর মুঠোফোনে বলেন, ওই শ্রমিক অসুস্থ ছিল। তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরো বলেন,  ওই ইটভাটা এখন আমিই চালাই। গত বছর ভাইস চেয়ারম্যান ছিল এ বছর তিনি ছেড়ে দিয়েছেন।

আমতলী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে মরদেহের সুরতহাল করা হয়েছে। একটি কক্ষ থেকে লোহার শিকল উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রাকিব নামক একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে।

সহকারী পুলিশ সুপার (আমতলী সার্কেল) রুহুল আমিন বলেন, আনিস নামের একজন শ্রমিককে ইটভাটার লোকজন  লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতনে মারা গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।  

এইচআর