মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের উত্তর পাঁচখোলা গ্রামে এক সময় দুচোখ যতদূর যেত ততদূর ছিল সবুজের সমারোহ। দুই-তিন ফসলি জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলতো। ইটভাটার আগ্রাসনে সেই সব ফসলি জমি হারিয়ে গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার উত্তর পাঁচখোলা গ্রামের ফসলি জমিতে রহিম খান ও সোবাহান ফকির গড়ে তুলেছেন একাধিক ইটভাটা। বিভিন্ন স্থানে গভীর গর্ত করে উর্বর মাটি তুলে ফেলা হয়েছে। আবার কোথাও সারি সারি ইট সাজিয়ে রাখা হয়েছে। পাশেই চিমনি দিয়ে বের হচ্ছে কালো ধোয়া।
এতে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। শুধু এই দুই মালিকই না। এমন চিত্র সারা মাদারীপুরেই। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নেই গড়ে তোলা হয়েছে ২৩টি ইটভাটা। এদের অধিকাংশ ইটভাটার ইট পোড়ানোর অনুমতি আছে। স্থানীয়দের অভিযোগ পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্মাদের যোগসাজশেই চলছে এই অবৈধ কর্মকাণ্ড। এতে করে স্বাস্থ্যগত মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এ কারণে ক্ষুব্ধ সাধারণ নাগরিকরা।
পাঁচখোলা গ্রামের বাসিন্দা মোকলেসুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘আমাদের এলাকায় আগে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদিত হতো। কিন্তু গ্রামের অধিকাংশ ফসলি জমি এখন ইটভাটার দখলে। এরা জমি এমনভাবে গর্ত করে যাতে করে পাশের জমি ভেঙে পড়ে। এভাবই জমিগুলো দখল করছে। ইটভাটার কারণে নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে মানুষ। আমরা এর প্রতিকার চাই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদারীপুর কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, ‘কৃষি ও কৃষিজমি নষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ইটভাটা। এছাড়া ভাটার দূষণ ও বিরূপ প্রভাবে আশপাশের জমির ফসলহানি হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের উচিত নয় ফসলি জমি নষ্ট হয় এমন স্থানে ইটভাটার লাইসেন্স দেয়া। অথচ, ফসলি জমিতেই গড়ে উঠেছে ইটভাটা।’
মাদারীপুর জজ কোর্টের এপিপি অ্যাডভোকেট আবুল হাসান সোহেল বলেন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনে বলা আছে আবাসিক এলাকা ও কৃষি জমিতে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না।
শুধু তাই নয়, ওই আইনে বলা হয়েছে নির্ধারিত সীমারেখার (ফসলি জমি) এক কিলোমিটারের মধ্যেও কোনো ইটভাটা করা যাবে না। মাদারীপুর ইটভাটা শিল্প মালিক সমিতির দায়িত্বশীল নেতারা এ বিষয় কথা বলতে রাজি হননি। এমনকি অভিযুক্ত ইটভাটা মালিকরাও কথা বলতে চান না।
এ ব্যাপারে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল মামুন বলেন, ‘কোনো কৃষি জমি নষ্ট করে ইটভাটা করা যাবে না। আইনগতভাবে এটা নিষিদ্ধ। অবৈধ ইটভাটা থাকলে সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে।’
এইচআর