বাহারি ঘুড়ি নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠে ফরিদপুর শহরতলীর পদ্মার পাড়ে আগত হাজারো মানুষ। ড্রাগণ, হাজারী গোলাপ, পঙ্খিরাজ, চিল, ডিঙ্গি নৌকা, জাতীয় পতাকা সম্বলিত ঘুড়ি সহ অসংখ্য ঘুড়ি।
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) বিকাল পাঁচটার টার দিকে ফরিদপুর সদরের পদ্মাপাড়ের ধলার মোড়ে এ ঘুড়ি উৎসবের উদ্বোধন করেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল আহসান তালুকদার।
গত সাত বছর যাবৎ ওই এলাকায় ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করে আসছে ফরিদপুর সিটি অর্গানাইজেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সেই ধারাবাহিকতায় বিকালে ‘চলো হারাই শৈশবে’ প্রতিপাদ্য নিয়ে পেপারটেক ইন্ডাষ্ট্রি লিমিটেডের সহযোগিতায় ৭ম বারের মতো ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করেন সংগঠনটি। এ সময় ফরিদপুর পুলিশ সুপার মোর্শেদ আলম, কোতয়ালী থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) হাসানুজ্জামান হাসান, ডিক্রিরচর ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু সহ অনেকে।
[272698]
দেখা যায়, উৎসব দেখতে ফরিদপুর শহর ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দারা ভিড় করেন। সেখানে ঘুড়ি বিক্রির ব্যবস্থাও ছিল। এই উৎসবে পরিবার নিয়ে এসেছেন ফরিদপুর শহরের চরকমলাপুর এলাকার বাসিন্দা তামান্না আক্তার। তিনি বলেন, ঘুড়ি উৎসব ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে। দেশের অন্য কোথাও এরকম আয়োজন হয় কি-না জানা নেই। আমি এখানে গত তিনবছর যাবৎ আসছি, আমার খুবই ভাল লাগে। প্রতিবছর এইদিনটির জন্য অপেক্ষা করি। এবার পরিবারের সকলকে নিয়ে এসেছি।
এ বিষয়ে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ইংরেজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক দেবাশীষ দাস বলেন, শহুরে নাগরিক জীবনে আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও শিখরের কথা নতুন প্রজন্ম প্রায় ভুলতেই বসেছে। এখানে এসে যেন শৈশবে হারিয়ে গেছি। ঘুড়ি উড়ানো আমাদের বাঙালীর সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং ঐতিহ্য। এমন আয়োজনে এসে আমাদের শিখরে চলে গেছি। এই তরুণ আয়োজকেরা আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে আমরা শৈশবে এভাবে ঘুড়ি উড়াতাম।
ফরিদপুর সিটি অর্গানাইজেশনের রোকন উদ্দিন বলেন, ঘুড়ি আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। সেই ঐতিহ্যকে ধারণ করে রাখতে প্রতিবছর এই আয়োজন করে থাকি। শৈশবের স্মৃতিতে ফিরে যেতে অনেকে রং বেরংয়ের ঘুড়ি উড়াচ্ছে। এখানে ফরিদপুরের বাইরে থেকেও অনেকে এসেছে।
[272698]
উদ্বোধনকালে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ঘুড়ি আমাদের হারিয়ে যাওয়া শৈশবের স্বপ্ন, আমাদের বর্তমান যৌবনের স্বপ্ন। ঘুড়ি আকাশে যখন উড়ে বেড়ায় তখন আমরা শুধু তাকিয়ে থাকিনা, এই সৌন্দর্য উপভোগ করি। এই সৌন্দর্য ফরিদপুরবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করবো।
তিনি আরও বলেন, চর কেন্দ্রিক এই উৎসবকে স্থায়ী রুপ দিতে আমাদের বিশেষ পরিকল্পনা আছে। ঘুড়ি উৎসবের পাশাপাশি আমাদের হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ খেলাধুলা, বৈশাখী মেলা সহ বিনোদনমূলক উৎসবের ব্যবস্থা করা হবে।
এআরএস