মধ্যবয়সী বাকপ্রতিবন্ধী (বোবা) অহিদ উল্যাহ ও মো. সেলিমকে পানিতে চুবিয়ে এবং বিবস্ত্র করে রাতভর নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হলেও মূল অভিযুক্ত আসামী সোহাগ পাটোয়ারীকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
রোববার (২৮ জানুয়ারী) দুপুরে যোগাযোগ করা হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চন্দ্রগঞ্জ থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক সুমন সরকার জানিয়েছেন, ঘটনার মূলহোতা সোহাগ পাটোয়ারীকে গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন্ স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু বার বার স্থান পরিবর্তন করায় তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে, পুলিশ তাকে ধরার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, মুখবধির অহিদ উল্যাহ (৪৪) ও মো. সেলিম (৪৫), তাদের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের তুলাচরা গ্রামে। গত ২৩ জানুয়ারী মঙ্গলবার তারা দুজনে একসাথে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে হযরত দেওয়ানশাহ (রঃ) ফকিরের দরগাহ মেলায় আসেন। সারাদিন তারা মেলায় আগতদের কাছে সাহায্য (ভিক্ষা) হিসেবে টাকা কালেকশন করেন।
এতে তাদের দুজনের ৫ হাজার টাকার মত রোজগার হয়। ওইদিন রাত ১০টার দিকে স্থানীয় রামচন্দ্রপুর গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে সোহাগ পাটোয়ারীর নেতৃত্বে ৮/১০জন মিলে ভিক্ষাবৃত্তির ওই টাকা হাতিয়ে নিতে বোবা অহিদ উল্যাহ ও সেলিমকে তারা ধরে নিয়ে যায় দেওয়ানশাহ মাজার সংলগ্ন কমিউনিটি ক্লিনিকের পেছনে।
একপর্যায়ে তাদের কাছে থাকা ৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিতে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এসময় সোহাগ পাটোয়ারী, সোলেমান, মানিক, লাভলুসহ আরো কয়েকজন মিলে বোবা অহিদ উল্যাহ ও সেলিমকে বিবস্ত্র করে বেদম মারধর এবং প্রচন্ড শীতের রাতে প্রথমে পাশ্ববর্তী পুকুরে নামিয়ে দুইশ’টি ডুব দিতে বাধ্য করে। তীব্র ঠান্ডায় বোবা অহিদ উল্যাহ ও সেলিম থরথর করে কাঁপছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বার বার পানিতে চুবানোর পর পুকুর থেকে তুলে এনে অহিদ উল্যাহ ও সেলিমের বিরুদ্ধে মোবাইল ছুরির অভিযোগ এনে পুনরায় তাদের হাত-পাঁ বেঁধে রাতভর মধ্যযুগীয় কায়দায় আবারও নির্যাতন চালানো হয়। এসময় সোহাগ পাটোয়ারী ঘটনাটি নিজের ফেসবুকে লাইভ দেয়। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ বাকপ্রতিবন্ধী অহিদ উল্যাহ ও মো. সেলিমকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠায়।
পরে বোবা অহিদ উল্যাহ ও সেলিমের দেখানো মতে সোলেমান নামে একজনকে আটক করে পুলিশ। ঘটনার পরদিন বুধবার অহিদ উল্যাহ’র পিতা মফিজুর রহমান থানায় এসে ভিকটিমদের সনাক্ত মোতাবেক আরো ৩জনসহ এজাহারনামীয় ৪ ও অজ্ঞাত আরো ৫/৬জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর থেকে প্রধান অভিযুক্ত সোহাগ পাটোয়ারী, মানিক ও লাভলুসহ অন্যান্যরা পলাতক রয়েছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় মাদ্রাসার এক শিক্ষক জানিয়েছেন, ছুটির পরে ছাত্রীরা বাড়ি যাওয়ার পথে সোহাগ মেয়েদেরকে উত্ত্যক্ত করে সোহাগ পাটোয়ারী। ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের সাথে চলাফেরা করায় তাকে কেউ কিছু বলতে সাহস পায়না। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে এলাকায় চাঁদাবাজিসহ বিস্তর অভিযোগের কথা জানান স্থানীয়রা।
চন্দ্রগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইমদাদুল হক জানিয়েছেন, ঘটনার খবর পেয়ে সাথে সাথেই ভিকটিমদের উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ এবং অভিযুক্ত একজনকে আটক করা হয়। এঘটনায় ভিকটিম অহিদ উল্যাহ’র বাবা মামলা করেছেন। প্রধান অভিযুক্ত সোহাগ পাটোয়ারীকে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে। তবে, অচিরেই সে ধরা পড়বে।
এইচআর