অতিথি পাখিতে মুখর রাঙ্গাবালীর চরাঞ্চল

রাকিব হোসাইন, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৪, ০৩:০১ পিএম
উপজেলার সোনারচরে অতিথি পাখির কলকাকলিতে সরগম। ছবি: আমার সংবাদ

কনকনে মাঘের শীতের ঘনঘটায় বিচিত্র অতিথি পাখপাখালির মধুময় কলতানে মুখরিত হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেষা পটুয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীর পর্যটন সম্ভাবনাময় সোনারচর ও চরহেয়ারসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল।

এই অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমির মিলনমেলায় অংশ গ্রহনের জন্য ইউরোপ, সাইবেরিয়া, এশিয়ার কিছু অঞ্চল এবং হিমালয়ের আশপাশের এলাকা হতে আগমন ঘটে এই অতিথি পাখির। বাংলাদেশ তুলনামূলক কম শীতের দেশ হওয়ায় খাদ্য ও নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় চলে আসে এই অতিথি পাখিরা। 

অতিরিক্ত শীত থেকে পরিত্রাণের কারণে দেশের বিভিন্ন চরাঞ্চলে ও সমুদ্রসৈকত মুখরিত হয় অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে। আর এই অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন ভ্রমণপিপাসুরা। এরই মধ্যে প্রকৃতিপ্রেমীদেরকে আকৃষ্ট করেছে বিচিত্র ও বর্ণিল অতিথি পাখির দল।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, প্রতিবছর শীতকালে এসব চরাঞ্চলে বালিহাঁস, পানকৌড়ি, ডাহুক, কানা বক, সরালি, মাছরাঙা, গাংচিলসহ অসংখ্য দেশি-বিদেশি পাখিদের সমাগম ঘটে। অতিথি পাখিরা আসে মূলত শীত প্রধানদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে। এরা আমাদের দেশের পরিযায়ী পাখি বা অতিথি পাখি হিসেবে পরিচিত। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে এরা আমাদের দেশে আসতে শুরু করে। সমূদ্রঘেঁষা রাঙ্গাবালীর চরাঞ্চলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় অতিথি পাখির দল। পাখিদের দল বেঁধে উড়ে বেড়ানো আর খাবার সংগ্রহের দৃশ্য যেন মনমুগ্ধকর। পাখিদের কিচিরমিচিরে মুখরিত থাকে এসব চরগুলো। মার্চ থেকে এপ্রিলের দিকে ওদের দেশে বরফ গলতে শুরু করলে ফিরে যেতে থাকে নিজেদের দেশে।

পর্যটকদের ভাষ্যমতে, শীতের মৌসুমে ইউরোপ, সাইবেরিয়া, এশিয়ার কিছু অঞ্চল এবং হিমালয়ের আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত বরফ পড়ার কারণে তুলনামূলক কম শীতের বাংলাদেশে খাদ্য ও নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় চলে আসে এ অতিথি পাখিরা। তাই বাংলাদেশের বিভিন্ন চরাঞ্চলে ও সমুদ্রসৈকত মুখরিত হয় অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের অন্তর্গত সোনারচর ও চরহেয়ার সমুদ্রসৈকত অতিথি পাখিদের রাজ্য। পাখিদের কলকাকলিতে আনন্দিত আগত পর্যটকরাও। মন ভরে উপভোগ করছেন পাখির ওড়াউড়ি, কলকাকলি আর কিচিরমিচির ডাক। কেউ তুলছে ছবি কেউবা করছে ছুটাছুটি। আবার সুন্দর মুহুর্ত সঞ্চয় করার জন্য দর্শনার্থীরা করছে ক্যামেরাবন্দি। পাখিদের কাছে যেতেই ঝাঁক বেঁধে কিচিরমিচির শব্দে উড়তে শুরু করে আকাশে। তবে সকাল ও বিকালবেলায় দেখা মেলে এসব অতিথি পাখির।

সোনারচর সমুদ্রসৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটন প্রেমি কাকলি বলেন, এই দৃষ্টি নন্দন সোনারচরে অপরূপদৃশ্য দেখে আনন্দে মনটা ভরে গেল। কারণ ঘুরতে এসে বিভিন্ন ধরনের অতিথি পাখি দেখলাম। অতিথি পাখি ছাড়াও সন্ধ্যার সময়টাও বেশ উপভোগ্য ছিল। তবে আমি মনে করি, এই অপার সম্ভামনাময় নয়নাভিরাম স্থানটি সংশ্লিদের প্রচেষ্টায় আরো সুন্দর মনোরম পরিবেশের বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। যারফলে এখানকার দৃশ্য উপভোগ করার জন্য বিভিন্ন স্থান হতে বিনোদন প্রিয়দের সমাগম ঘটাবে।

বনবিভাগের চরমোন্তাজ রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, নানান প্রজাতির দেশি ও পরিযায়ী পাখিদের আগমনে এই সোনারচর মুখরিত হয়ে উঠে। যার ফলে বিভিন্ন এলাকার মানুষ এ সব দৃশ্য উপভোগের জন্য এখানে আসে। অন্যদিকে সোনারচরে দিনদিন অতিথি পাখির আগমন বাড়ছে। এসব অতিথি পাখি প্রকৃতির অলংকার। অন্যদিকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য পাখির বিচরণক্ষেত্র রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানুর রহমান বলেন, উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলের তুলনায় অন্যতম সোনারচর এবং চরহেয়ার নামক সৈকতে শীতের মৌসুমে পরিযায়ী পাখিদের মিলনমেলা ও সমূদ্রের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকদের আগমন ঘটে।

এআরএস