কখনো পুলিশের জেলা বিশেষ শাখার (ডিএসবি) সদস্য, কখনো পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও এমপি-মন্ত্রীর সঙ্গে সুসম্পর্ক এমন নানাবিধ পরিচয়ে সরকারি চাকরি নিয়ে দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া এক প্রতারকের সন্ধান পেয়েছে আমার সংবাদ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক যুবককে পুলিশে চাকরি নিয়ে দেওয়ার কথা বলে তার পরিবারের কাছ থেকে নিয়েছেন ১ লাখ টাকা। বিনিময়ে দিয়েছেন ভুয়া সুপারিশপত্র এবং অন্যের নামে থাকা ইসলামি ব্যাংকের চেক।
শুধু চাকরি নিয়ে দেওয়া নয়। পুলিশ পরিচয়ে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করেন এই প্রতারক। বিচারকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক আছে এমন চমৎকার গল্পে বিভিন্ন মামলার আসামিদের জামিন করিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের পরিবারের কাছে থেকে নেন লাখ টাকা পর্যন্ত।
এমন বহুরূপী প্রতারক শামীম মিয়া। দীর্ঘদিন যাবত তিনি থাকেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায়। পৌর এলাকার নয়াপাড়া গ্রামের মোকছেদ আলীর মেয়েকে বিয়ে করে সেখানেই ঘরজামাই থাকেন প্রতারক শামীম। তার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার সিধনগ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আব্দুল গফুর মিয়ার ছেলে।
গত বছর ঘোড়াঘাট পৌর এলাকার এসকে বাজার গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে ওমর ফারুক ফয়সালকে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি নিয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রথম দফায় ১ লাখ টাকা নেন শামীম। কিছুদিন পর চাকরিপ্রার্থী ফয়সালের পরিবারকে পুলিশ সদর দপ্তরের প্যাডে একটি সুপারিশপত্র ধরিয়ে দেন প্রতারক শামীম। সেই সুপারিশপত্রে অতিরিক্ত আইজিপি কামরুল আহসান বিপিএম (বার) এর স্বাক্ষর করা আছে। সুপারিশপত্রের উপরে পুলিশ সদর দপ্তরের আইসিটি শাখার একটি সিল যুক্ত করা হয়েছে।
তবে টাকা দেওয়া এবং সুপারিশপত্র পাওয়ার এক বছর অতিবাহিত হলেও ছেলের চাকরি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন ফয়সালের পরিবারের। এরপর জানতে পারেন শামীম একজন প্রতারক। একইভাবে আনসার বাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ঘোড়াঘাট পৌরসভার কালিতলা গ্রামের শফিউল ইসলামের কাছে থেকে নেন অর্ধলাখ টাকা। শফিউল তার ছেলের চাকরির জন্য সেই টাকা দিয়েছিলেন। প্রতারক শামীম সেই একইভাবে একটি ভুয়া সুপারিশপত্র ধরিয়ে দেন শফিকুলের হাতে। তবে শেষ পর্যন্ত আনসার বাহিনীতে তার ছেলের চাকরি হয়নি।
শুধু চাকরির নামে প্রতারণা নয়। প্রতারক শামীম নিজেকে দিনাজপুর জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) সদস্য পরিচয় দিয়ে ঘোড়াঘাট উপজেলার বালুমহল, ইটভাটা ও বিনোদন পার্কসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদা দাবি করে বেড়ান। যা খোদ পুলিশ সদস্যের হাতে ধরা পড়ে। তবে মৌখিকভাবে মাফ চেয়ে সেবারের মতো পার পেয়ে যান প্রতারক শামীম।
একেবারে বেকার প্রতারক শামীম দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট এবং গাইবান্ধার পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ থানা চত্বরে ঘুরে প্রথমে টার্গেট করেন। এরপর বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার থাকা আসামিদের জামিন করিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের পরিবারের কাছে থেকে দফায় দফায় টাকা নিতে থাকেন শামীম।
ছেলের চাকরির জন্য টাকা দেওয়া ভুক্তভোগী সিরাজুল ইসলাম রাজু আমার সংবাদকে বলেন, আমাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়েও কথা বলেছিল শামীম। ভুয়া কাগজ দিয়েছে। এক বছর হচ্ছে আমার টাকা ফেরত দেয়নি।
ঘোড়াঘাট-হাকিমপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শরিফুল ইসলাম বলেন, ঘটনা শুনেছি। তদন্তপূর্বক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য আমরা কাজ করছি। পুলিশ বাহিনী বা অন্য কোনো সরকারি বাহিনীতে চাকরিতে কোনো ধরনের টাকা লেনদেনের সুযোগ নেই। কেউ প্রতারণা করলে কঠোর আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ভুয়া সুপারিশপত্রটি আমরা পেয়েছি। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া।
ইএইচ