জেলা মৎস্য অফিসের অভিমত

‘মৎস্য সেক্টর রক্ষায় মাছের খাবারের দাম কমানোর দাবি’

ফরিদপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪, ০৮:২০ পিএম
ছবি: আমার সংবাদ

ফরিদপুরে জেলা মৎস্য সম্মেলনে মাছের খাবারের দাম বৃদ্ধিতে উদ্বেগ জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এক কেজি মাছ উৎপাদনে দেড় কেজি খাবার দরকার হয়। ১১৮ টাকার নিচে কোন খাবার নেই। মাছের দাম না কমানো গেলে এই সেক্টরটি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

তারা বলেন, জলাশয় পুনঃখননের ব্যাপারে অনেক অভিযোগ আছে। কিন্তু জলাশয় ভরাটের ব্যাপারে কিছু বলা হয়না।

জেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে ফরিদপুরে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত জেলা মৎস্য সম্মেলনে মাছ চাষি ও হ্যাকারদের পক্ষ থেকে একথা বলা হয়। জেলার বিদ্যমান মৎস্য সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও সর্বোচ্চ মাছ উৎপাদনে করণীয় বিষয়ে সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার।

এসময় জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, দেশে মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা মৎস্য খাতে ফরিদপুর থেকে একটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন করতে চাই। ফরিদপুরের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে একটি ইকোনমিক জোন গড়ে তুলতে পারলে এ সংক্রান্ত সব সমস্যার সমাধান করতে পারি।

তিনি বলেন, টেপাখোলা ভুবনেশ্বর নদী ব্যক্তি নামে রেকর্ড করা হয়েছে। সেখানে ১৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পর্যটন স্পট করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পর্যটন স্পট করলে সেখানে কোনো ধরনের মাছ থাকবে না। মৎস্য চাষ ধ্বংস করে এমন কিছু হতে দেবেন। ব্যক্তির নামে কখনো নদী রেকর্ড হতে পারেনা। যেসব নদী ব্যক্তির নামে রেকর্ড হয়েছে আমরা সেগুলো উদ্ধারের ব্যবস্থা নেবো।

সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানা যে-সব জলাশয় পতিত অবস্থায় রয়েছে, সেগুলো পুনঃখনন করা যাবে। সরকারি জলাভূমি পুনঃখনন করে নামমাত্র মূল্যে মাটি নিতে পারবে ইটভাটায়। তবে ড্রেজার মেশিন লাগানো যাবেনা। বেকু বা মজুরদের দিয়ে মাটি কাটা যাবে।

এসময় হজরত শাহ্ জালাল মৎস্য এন্ড ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী তাজমিনউর রহমান বলেন, মৎস্য সম্পদের সম্প্রসারণ করতে হলে ঘের চাষিদেরকে ধান চাষের মতো মাছ চাষের জন্য ভর্তুকি মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।

সম্মেলনে কুমার নদে মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তোলা, কচুরিপানায় পানির দূষণ, নদীতে ময়লা আবর্জনা ফেলা, ব্যক্তির নামে নদীর রেকর্ড, মাছের ঘেরের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল, পোল্ট্রি লিটারের মাছ আমদানি, হাজামজা ও পুকুর ভরাট, প্রবাহমান নদী আটকে পেন কালচারে মাছ চাষ, বিলের পতিত জমি ইজারা, কুচিয়া ও শুঁটকি উৎপাদন, গভীর রাতে জাটকা বিক্রি, মৎস্য দপ্তরের জনবল সংকট, মাছ চাষীদের ব্যাংক ঋণ সহ নানা বিষয় তুলে ধরা হয়। ঘের চাষীদের ধান চাষের মতো মাছ চাষের জন্য ভর্তুকি মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানানো হয়।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সরকারের সভাপতিত্বে সম্মেলনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইয়াছিন কবিরসহ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাগণ, মৎস্য চাষি, হ্যাচারি মালিক ও মৎস্যজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, আমরা ফরিদপুরের সব হাজামজা পুকুরের তালিকা করবো। সবগুলো পুকুরের তালিকা করে আমরা এর তালিকা করবো। এজন্য দুইমাসের সময় চেয়ে নেন মৎস্য কর্মকর্তাগণ। পাশাপাশি মৎস্য চাষীদের তালিকা করবো। ফরিদপুরে মাছের পাশাপাশি ঝিনুক চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এটি এখনো প্রদর্শনী কার্যক্রমে সীমিত রয়ে গেছে।

তিনি বলেন, বৃহত্তর ফরিদপুরে মাছের খাবার পরীক্ষার কোনো ল্যাব নেই। ঢাকা কিংবা খুলনা থেকে খাবারের নমুনা পরীক্ষা করাতে হয়। এজন্য ফরিদপুরে মৎস্য খাদ্য ল্যাব স্থাপনের সুযোগ রয়েছে। ফরিদপুরে চিংড়ি চাষের হার খুবই নিম্ন। এখানে গলদা চিংড়ি চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। বিলের মাঝে পুনঃখনন করবো যাতে পানি কমে গেলে দেশীয় মাছ গভীর পানিতে থাকতে পারবে।

বক্তাগণ বলেন, কুমার নদে কচুরিপানার জন্য মাছ চাষ ব্যাহত হয়। পুরো নদীতে কচুরিপানা জমি বিরাট সমস্যা করে। এছাড়া ফরিদপুরে বিস্তীর্ণ জমিতে পাট চাষ হয়। খালবিলে পাট জাগ দেয়ার জন্য আলাদা কিছু পুকুর রাখা হবে।

তারা বলেন, ফরিদপুরের অনেক উপজেলায় নিম্মভূমিগুলো বছরের ৬ মাস পানিতে ডুবে থাকে। এসবস্থানে মাছের চাষ করা যাবে।

সম্মেলনে মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন যুগোপযোগী করার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, বর্তমান আইনে জরিমানা মাত্র ৫ হাজার টাকা। হ্যাচারিতে রেনুর পরিস্থিতি উন্নয়নে আমাদের সাপোর্ট এবং মৎস্য চাষীদের প্রশিক্ষণের কথাও তারা বলেন। ‘একের ভিতরে নয়, ধানের ক্ষেতে রুই’ জনৈক মাছ চাষির এ প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করা যায় কিনা সেটিও দেখা হবে।

সম্মেলনে বলা হয়,  রাস্তাঘাটে ফুচকা নয়, মাছ ফ্রাই করে বিক্রি হবে। দেখেন কীভাবে বিক্রি হয়।

এআরএস