হোসেনপুরে রঙিন ফুলকপি চাষে ভাগ্য বদল চাষিদের

হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪, ০২:২২ পিএম

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে প্রথমবারের মতো চাষ হয়েছে বেগুনি ও কমলাসহ বিভিন্ন জাতের রঙিন ফুলকপি। অল্প খরচে বেশি লাভ এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর বিধায় এসব রঙিন ফুলকপি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন উপজেলার বেশিরভাগ কৃষক।

অনেকেই আবার সাদা ফুলকপি চাষ বাদ দিয়ে রঙিন ফুলকপি চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার জগদল ব্লকের বিলচাতল গ্রামের আদর্শ কৃষক মো. আনাম মিয়া এ বছর প্রথম বারের মতো ২০ শতক জমিতে রঙিন ফুলকপি ও ৩০ শতক জমিতে সাদা ফুলকপি চাষ করেন। কিন্তু সাদা ফুলকপির তুলনায় তিনি রঙিন ফুলকপিতে দ্বিগুণেরও বেশি লাভ করেছেন।

সরেজমিনে গেলে কৃষক মো. আনাম মিয়া জানান, তার চাষকৃত রঙিন জাতের ফুলকপির খরচ সাদা ফুল কপির মতোই। তবে দাম সাদা কপির চেয়ে ২-৩ গুণ বেশি । সাদা ফুলকপি যখন প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০টাকা। তখন রঙিন ফুলকপি প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া বেগুনি রঙের ফুলকপি ওজনে প্রতিটি দুই থেকে আড়াই কেজি হচ্ছে। বাজারে তুলনামূলক ওইসব রঙিন ফুলকপির চাহিদা অনেক বেশি রয়েছে। তবে দাম অধিক হলেও ক্রেতারা কিনতে অনেক বেশি আগ্রহী।

তিনি আরও জানান, এ বছর স্থানীয় কৃষি অফিসের সহযোগিতায় প্রথমবার বেগুনি ও কমলাসহ বিভিন্ন রঙের ফুলকপি চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। অন্যদিকে বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পেয়ে আগামীতে আরও বেশি জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

এ সময় উপজেলার বাসুরচর গ্রামের কৃষক মো. আবুল হাসিম, আবুল বাশারসহ অনেকেই জানান, তারা এ বছর সাদা জাতের ফুলকপি চাষ করে খুব বেশি লাভ করতে পারেনি। তাই আনামের রঙিন ফুলকপির বাম্পার ফলন ও অধিক লাভের কথা শুনে আগামীতে তারাও ব্যাপক হারে রঙিন ফুলকপি চাষে আগ্রহী হয়েছেন। এ জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শও নিচ্ছেন তারা।

উপজেলার জগদল ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. মুদাসিল হায়দার আলমগীর জানান, সারা উপজেলার মধ্যে পুমদী ইউনিয়নের জগদল ব্লকে প্রথম বারের মতো প্রদর্শনীর মাধ্যমে চাষ করা হয় লাভজনক রঙিন ফুলকপি। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় এ রঙিন ফুলকপি চাষ করা হয়। এটি তুলনামূলক উচ্চমূল্যে বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন উপজেলার বিলচাতল গ্রামের কৃষক মো. আনাম মিয়া। এবার বেগুনি রঙের ফুলকপির ফলন ও বাজার মূল্য ভালো দেখে অনেকেই রঙিন ফুলকপি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তাই আগামীতে আরও বেশি জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষে কৃষকদের সম্পৃক্ত করতে সচেষ্ট রয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ একেএম শাহজাহান কবির জানান, অতিরিক্ত পরিমাণে বিটা ক্যারোটিনের কারণে ফুলকপি কমলা রঙের হয়। এটিতে অন্য রঙের তুলনায় পঁচিশ গুণ বেশি ভিটামিন থাকে। আবার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অ্যান্থোসিয়ানিন্সের উপস্থিতির কারণে ফুলকপির রঙ বেগুনি হয়। বেগুনি রঙের ফুলকপি রান্নার পর বিবর্ণ হলেও কমলা রঙের ফুলকপি বিবর্ণ হয় না। কমলা রঙের ফুলকপির মতো বেগুনি ফুলকপিতেও সাদা ফুলকপির তুলনায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে। তাছাড়া বেগুনি রঙের ফুলকপি প্রদাহ উপশম, কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও উপকারী। তাই সমগ্র উপজেলার কৃষকদের মধ্যে এসব রঙিন ফুলকপি চাষে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ইএইচ