গত কয়েক বছর থেকে আমের দাম ক্রমাগত কমে যাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন নাটোরের বাগাতিপাড়ার আম চাষিরা। অন্যদিকে জমি লিজ দিলে বা অন্য ফসল, ফলের বাগান করেও লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
তাই এ লোকসানের কারণে উপজেলার প্রায় ৭৫০ বিঘা জমির আম বাগান কেটে ফেলেছেন আম চাষিরা। এভাবে আমবাগান সাবাড় হতে থাকলে অদূরভবিষ্যতে আম সংকটে পরবে বাগাতিপাড়া উপজেলাসহ অন্যান্য অঞ্চলও।
স্থানীয় সচেতন মহল ও চাষিদের দাবি, আম বাগান কর্তনের এই পরিমাণ ১ হাজার বিঘা ছাড়িয়ে যাবে। তাই বাকি বাগান কর্তন বন্ধে আমচাষিরা দ্রুত সরকারি উদ্যোগে আম সংরক্ষণাগার ও বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মোট ৯ হাজার ২০০ বিঘা আমবাগান বাগাতিপাড়া উপজেলায়। এর মধ্যে চলতি বছরে পুরোনো ও কম উৎপাদনশীল জাতের প্রায় ৭৫০ বিঘা আমবাগান কর্তন করা হয়েছে। তার বিপরীতে ৩৬৫ বিঘা জমিতে আধুনিক ও উচ্চ ফলনশীল জাতের আম গাছ পুনরায় লাগানো হয়েছে। আর বাকি জমিগুলোতে লাভজনক ফল-ফসল, কলা, ড্রাগন, কূল, পেয়ারা ও সবজি চাষ করা হয়েছে।
আরও জানা যায়, সবচেয়ে বেশি আম বাগান কর্তন করা হয়েছে উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নে। এছাড়া বাগাতিপাড়া সদর, জামনগর, ফাগুয়াড়দিয়াড়, দয়ারামপুর ইউনিয়ন এবং পৌরসভাতেও কমবেশি আম বাগান কর্তন করা হয়েছে। এর মধ্যে লক্ষণভোগ, ফজলি এবং ল্যাংড়া জাতের আম বাগান বেশি কর্তন করা হচ্ছে বলেও অফিস সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় আমচাষিরা বলেন, গত কয়েক বছর ধরে শ্রমিকের মজুরিসহ সার ও কীটনাশকের দাম কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে বাগান ও আমের পরিচর্যা খরচও বেড়ে গেছে। অপরদিকে দিন দিন কমেছে আমের দাম। ১৪-১৫ বছর আগে যে আম প্রতিমণ বিক্রি হয়েছে, ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। সেই আম গত কয়েক বছর ধরে বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ মাত্র ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়। তাই সমপরিমাণ জমিতে আমবাগানের চেয়ে অন্য যেকোনো ফসল চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। তাই বাগানের জমিগুলো এখন ফসলের মাঠে পরিণত হচ্ছে।
পাঁকা ইউনিয়নের শালাইনগর গ্রামের মেহেদি হাসান বলেন, টানা কয়েকবছর থেকে আমের দাম কমতে থাকায় লোকসানে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাই তিনি বাধ্য হয়ে সম্প্রতি সাড়ে ১১ বিঘা জমির আম বাগান কেটে বিভিন্ন জাতের ফসল চাষ করেছেন। তাদের ইউনিয়নেই চলতি বছরে প্রায় ৩০০ বিঘার অধিক জমির আম বাগান কর্তন করেছেন চাষিরা বলে জানান তিনি।
একই ইউনিয়নের চকগোয়াস গ্রামের লিটন আলী বলেন, আম বাগানের পরিচর্যা খরচ দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। পক্ষান্তরে আমের দাম কমেছে। ফলে বাগানের চেয়ে অন্য যেকোনো ফসল চাষ করলে বা জমি লিজ দিলে লাভ বেশি। তাই তিনি চার বিঘা জমির আম বাগান কেটে ফেলে জমি লিজ দিয়েছেন ২৭ হাজার টাকা বিঘা হারে।
তমালতলা এলাকার বাণিজ্যিক ফল চাষি আব্দুল বারি বলেন, চলতি বছরে তিনি পাঁকা ইউনিয়নের চকতকিনগর মাঠে সদ্য আম বাগান কাটা প্রায় ২৪ বিঘা জমি লিজ নিয়েছেন ড্রাগন, পেয়ারা, কুল এবং কলাসহ উচ্চ ফলনশীল ফল চাষের জন্য।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ভবসিন্ধু রায় বলেন, মূলত অনেক পুরাতন এবং কম উৎপাদনশীল জাতের আম বাগানে চাষিরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান না হওয়ায় সেগুলো কেটে ফেলছেন। পক্ষান্তরে ওই জমিগুলোতেই বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক ফল ড্রাগন, পেয়ারা, কুলসহ উচ্চ ফলনশীল ফল চাষ করছেন।
ইএইচ