চাঁদপুর শহরে বেড়েই চলছে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। একের পর ঘটে চলছে মারামারি, হামলা ও রক্তাক্ত জখম করার মতো ঘটনাসহ বহু অপ্রীতিকর ঘটনা। আর এসব ঘটনাগুলো ঘটছে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, কিংবা পূর্ব শত্রুতার জেরে।
পুলিশি অভিযানের কারণে কিছুদিন নীরব থাকলেও চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে আত্মপ্রকাশ করা এসব গ্যাংয়ের সদস্যরা জেলা শহরে ইভটিজিং, চুরি, ছিনতাই, মাদক পাচার, অপহরণ এবং হত্যাকাণ্ডের মতো নানা অপরাধে জড়িত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ এসব কিশোর গ্যাংয়ের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মদদ জোগাচ্ছেন স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতা–কর্মী। এ কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলেও, তা খুব একটা কাজে আসছে না।
গত সরস্বতী পূজার পরদিন প্রতাপসাহা বাড়ির মাতৃ সংঘের অনুষ্ঠান চলাকালীন সময় একদল কিশোর অশোভন আচরণ করলে এলাকাবাসীর ধাওয়ায় অন্যান্যরা পালিয়ে গেলেও দুই কিশোরকে ধরে গণধোলাই দেওয়া হয়।
এদিকে বেশ কিছুদিন যাবত প্রতাপসাহা রোড এলাকায় চুরির উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলাকার যুব ও ছাত্রনেতারা এসব কিশোরদের তথাকথিত বড় ভাই। নেতারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এসব কিশোরদেরকে প্রলোভন দেখিয়ে দলে টানছেন। আর কিশোরেরা জড়াচ্ছে নানা অপরাধে। তাই এদের ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না।
এলাকাবাসীর অভিযোগ তাদের মেয়েদের স্কুলে যাওয়া আসার সময় ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হয়। তাই তারা তাদের মেয়েদের স্কুল কলেজে পাঠিয়ে একপ্রকার চিন্তায় থাকেন।
কিছুদিন আগে প্রতাপসাহা বাড়ি এলাকার বাসিন্দা মিমি দাস একদল বখাটে কিশোরের অত্যাচারে থানায় অভিযোগ দিয়েছিলেন। পরে দুজনকে তাদের গার্ডিয়ানসহ থানায় গিয়ে সেখানে আর আড্ডা দিবে না বলে মুচলেকা দিয়ে আসে। এখন আবার তারা হিংস্র হয়ে উঠেছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
এরই ধারাবাহিকতায় শহরের প্রতাপ সাহা রোড নতুন আলিম পাড়ায় আল-আমীন ছাত্রী শাখা ও লেডি দেহলভী নামক দুটি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থাকায় স্কুল আরম্ভ ও চলাকালীন সময়ে এক শ্রেণির বখাটে ছেলেদের ইভটিজিং করাসহ মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা ও পাড়ার বিভিন্ন চিপাগলিতে এদের ডেটিং করতে দেখা যায়। এর ফলে পরিবেশ হচ্ছে নষ্ট, আর সমাজ হচ্ছে কলুষিত।
এ ব্যাপারে স্কুল দুটির প্রধান শিক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা জানান, আমরা ওইসব ছাত্রীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি ও তাদের গার্ডিয়ানদের ডেকে সতর্ক করা হচ্ছে।
মাদক ও ধূমপানমুক্ত সংস্থা (মানষ) চাঁদপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান বলেন, চাঁদপুর শহর তথা পুরো জেলাকে মাদকমুক্ত করতে পুলিশের মনিটরিংয়ের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছেন যুবসমাজকে মাদক ইভটিজিং থেকে বিরত রাখতে বাবা মায়ের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে, এর পাশাপাশি পুলিশের মনিটরিং বাড়ানো প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, চাঁদপুর শহরে বের হলে দেখি রাস্তাঘাট ও শহরের পাড়া মহল্লায় উচ্ছৃঙ্খল কিশোর ছেলেদের রাতদিন অবাধ বিচরণ, এদের সংঘবদ্ধ আচরণ সুস্থভাবে সমাজে বসবাস খুবই কঠিন। তাই এদের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল ইয়াসির আরাফাত বলেন, চাঁদপুর শহরে কিশোর অপরাধীরা কোনোকিছুতেই শান্তির শহরকে অশান্ত করতে পারবে না। আমরা পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ইতোমধ্যে মাদক ও কিশোর অপরাধ দমনে কাজ করে যাচ্ছি, মাদক ও কিশোর অপরাধ একটি সামাজিক ব্যাধি তাই পুলিশের পক্ষে এ ধরনের ব্যাধি দূর করা সম্ভব না।
ইএইচ