দিন দিন আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে ইটভাটায় ফসলি জমির মাটি বিক্রি। এর ফলে একদিকে কমছে আবাদি জমির পরিমাণ, কৃষি জমির উপরি অংশ বা টপসয়েল নিয়ে যাওয়ার ফলে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যায়।
পাশের জমির মালিকরা এসব প্রভাবশালী মহলকে বাধা দিলেও তারা সে সব জমির মালিকদের বাধা উপেক্ষা করে নির্বিচারে জমির মাটি নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বড় বড় ট্রাকে এসব মাটি পরিবহণে নষ্ট হচ্ছে সড়ক। সেই সঙ্গে পরিবহণের সময় মাটি উড়ে নষ্ট করছে পরিবেশ। এতে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
শিগগিরই এসব বন্ধে পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদন কমতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। দিনাজপুর জেলায় ২৪১টি ইটভাটার মধ্যে বৈধ ভাটা ৬৬ অবৈধ ১৭৫ ভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে ফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে ইট ভাটার। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে পরিবেশ।
আইন অমান্য করে দিনের পর দিন ইটভাটার সংখ্যা বাড়লেও প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
দিনাজপুর বিরল উপজেলার ৪ নং শহর গ্রাম ইউনিয়নের রামপুর রাঙ্গামাটি পাড়ায় ইট ভাটা সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে ইট ভাটার মালিক মো. রশিদ বলেন, আমার ইট ভাটার প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র আছে এ ছাড়াও স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে আমি ম্যানেজ করে চালাই।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুর জেলায় ইটভাটার সংখ্যা ২৪১টি ইট ভাটা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে চলছে ৬৬ ভাটা। বাকি ১৭৫টির পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকলেও পুরো দমে চলছে ইট প্রস্তুত ও বিক্রয়। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অধিকাংশ ইটভাটা পরিচালিত হয়। অবৈধভাবে দিনাজপুর জেলায় ১৭৫টি ভাটা পরিচালিত হচ্ছে। অথচ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) ২০১৯ অনুযায়ী, বিশেষ কোনো স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিংবা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের চোখের সামনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে, ঘনবসতি এলাকায় ও ফসলের মাঠের কৃষি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। অধিকাংশ ইটভাটায় পরিবেশ বান্ধব কয়লার বিপরীতে অবাধে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। অবৈধ ট্রলির মাধ্যমে আশপাশের এলাকার ফসলি জমির মাটি এনে তৈরি করা হচ্ছে ইট। অবৈধ ইটভাটার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে মানুষ। দিনে ও রাতের আধারে ট্রাক ও শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলিতে করে বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি এনে ইটভাটায় ব্যবহার করছেন ভাটার মালিকেরা।
কৃষক আতিউর রহমান বলেন, আইন আছে কিন্তু কেউ মানে না। প্রতিবছরের মতো এবারও ইট তৈরির মৌসুমে প্রতিদিন ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ কারণে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ধোঁয়া ও ধুলাবালিতে ফসল ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
দিনাজপুর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান বলেন, হিমালয় পর্বত থেকে পানির সাথে বেয়ে আশা পলি মাটি তৈরি হতে ৫০ থেকে ১শ বছর সময় লাগে। এই পলিমাটি আমাদের কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। জমিতে উর্বর মাটির অনেক সংকট। অনেক রকম কীটনাশক সার বীজ ব্যবহারে জমির উর্বরতা হারিয়ে ফেলার সময় এসেছে, কারণ হিমালয় থেকে তৈরি হয়ে আসা পলি মাটি এখন ব্যবহার হচ্ছে ইট ভাটাসহ রাস্তা ভরাট বাড়ির আঙিনা ইত্যাদি কাজে। কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মাণের অনুমতি কৃষি বিভাগ থেকে দেওয়া হবে না। কৃষি জমিতে ইটভাটা করলে কৃষি জমির ফলন হ্রাস পায়।
এ বিষয়ে কৃষকদের পলি মাটি ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি করার অনুরোধ জানান দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম বোরহান-উল ইসলাম সিদ্দকী বলেন, ইটভাটার ধোঁয়া ও ধুলাবালি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া ও ধুলাবালি শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করলে অ্যাজমা ও অ্যালার্জি রোগ হয়।
দিনাজপুর পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রুবায়েত আমিন রেজা বলেন, এই পর্যন্ত মোট ৭টি ইট ভাটায় অভিযান চালায় পরিবেশ অধিদপ্তর সদর উপজেলায় ২টি ইট ভাটাতে ২০ হাজার টাকা, পার্বতীপুর উপজেলায় ৩টিতে ৬ লক্ষ, চিরিরবন্দর উপজেলায় ২টিতে ১ লক্ষ ৫০ হাজার, মোট ৭ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অবৈধ সব ইটভাটার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
বিআরইউ