মেঘ দেখলেই দিশেহারা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা

মাদারীপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০২৪, ০৫:৫১ পিএম

মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের আড়িয়াল খাঁ নদের পাড়ে অবস্থিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসবাসরত কয়েক হাজার মানুষের সমস্যার যেন শেষ নেই। এখানকার মানুষেরা অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে শুরু করে নানান সমস্যায় জর্জরিত। তার মধ্যে প্রধান সমস্যা তাদের বসত ঘর।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৪টি ব্যারাকে টিনের ২৪০টি ঘর রয়েছে। ঘরগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় প্রায় ৪০টি পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। ঘরের টিনের চাল মরিচা ধরে ফুটো হয়ে গেছে। কুয়াশা ও বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পেতে টিনের চালার উপরে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে পলিথিন। বেড়ার টিন ও লোহার অ্যাঙ্গেলে মরিচা ধরে খুলে পড়ছে। ঘরের বেশিরভাগ দরজা ও জানালা ভাঙাচোরা।

মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের আড়িয়াল খাঁ নদের পাড়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর এমন করুণ দশা।

ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ২৪০টি পরিবারের মধ্যে ৪০টি পরিবার এখন আর এসব ঘরে থাকে না। তারা বাধ্য হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে চলে গেছে। সেই জরাজীর্ণ ঘরগুলো এখন ফাঁকা পড়ে আছে। পরিত্যক্ত ফাঁকা ঘরগুলোর মধ্যে ঘটছে নানা প্রকার অবৈধ ঘটনা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের আড়িয়াল খাঁ নদীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৪টি ব্যারাকে টিনের ২৪০টি ঘর রয়েছে। অনেক ঘর ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। টিউবয়েলগুলো অকেজো হয়ে গেছে। নেই বিশুদ্ধ পানি পানের ব্যবস্থা। নাজুক অবস্থা প্রতিটি ব্যারাকের শৌচাগারের ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে সব বয়সের মানুষ। বসত ঘরের  টিনের চালায় মরিচা ধরে বড় বড় ছিদ্র হয়ে আছে। বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য টিনের চালার উপরে পলিথিন বিছিয়ে তার উপর ইট দিয়ে রাখা হয়েছে। ঘরের চারপাশের গাঁথুনি ইটের গাঁথুনি ভেঙে পড়ে মেঝের মাটি সরে গেছে। সিমেন্টের খুঁটিতে ফাটল ধরে কংক্রিট ধসে পড়ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, প্রায় বাইশ-তেইশ বছর হয়ে গেছে ঘর গুলোর। এর মধ্যে প্রতিটি ঘরের টিনের চালা ও টিনের বেড়ায় মরিচা ধরেছে। ঘরের দরজা-জানালা ভেঙে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টি হলে ঘরে পানি পড়ে। শীতের মৌসুমে টিনের ফাঁকফোকর দিয়ে বাতাস ঢোকে। ফলে ঠান্ডায় শিশু ও বৃদ্ধ বয়সের মানুষের রোগ বালাই লেগেই থাকে। বর্তমান অবস্থা, এখানে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা বরু বিবি (৮০) বলেন, আমার কেউ নেই, বৃদ্ধ বয়সে চলতে ফিরতে পারি না, মানুষ যা দেয় তাই খাই। অনেক আগে সরকার এই ঘর দিয়েছে, এখন ঘর ভেঙে গেছে ঝড় বৃষ্টি আসলে ভয় করে কোথায় যাব।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মুকুলি বেগম (৪৫) বলেন, সামান্য বৃষ্টি আসলেই টিনের চালা দিয়ে বৃষ্টি পানি পড়ে কাপড় চোপড় ও বিছানা ভিজে যায়। ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার বই ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। তখন ঘরে থাকাই কষ্টসাধ্য।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা আরও বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আশপাশে তাদের কর্মসংস্থানের কোনো ব্যবস্থা নেই। কাছাকাছি কোন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় তাদের সন্তানরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।  
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাস বলেন, বাঁশগাড়ি গুচ্ছগ্রামটি আমি সরজমিনে পরিদর্শন করবো এবং জরজীর্ন ঘরগুলোর জন্য সরকারি যে সুযোগ সুবিধা আছে, তার আওতায় আনার চেষ্টা করবো।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা তাহমিনা বেগম বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো অনেক আগে নির্মাণ করা হয়েছে তাই এগুলো জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে সরকার ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করবো যাতে  এই জরাজীর্ণ ঘরগুলো সংস্কার অথবা নতুন ঘরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ইএইচ