গাজীপুরের শ্রীপুরে টহলরত দুই পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় আন্তঃজেলা ডাকাত দলের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার রাতে যৌথ অভিযান চালিয়ে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার দুপুরে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ডাকাত দলের প্রধান ইসমাইল সর্দার লিটন ও তার সহযোগী হানিফ মাস্টার এবং কামরুল মিয়া।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা বিভিন্ন স্থানে ডাকাতির ঘটনার সম্পৃক্ত ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
র্যাব কর্মকর্তা কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তারকৃত ডাকাত রুবেলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব কেরানীগঞ্জ এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে ডাকাত দলের প্রধান ইসমাইল ও তার সহযোগী হানিফকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা স্বীকার করে ৬-৭ জন ডাকাত রোববার দুপুরে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ থেকে পিকআপযোগে গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকায় ডাকাতির উদ্দেশ্যে আসে। তারা শ্রীপুরের মাওনা-কালিয়াকৈর সড়কে ডাকাতির উদ্দেশ্যে সন্ধ্যা থেকে সুবিধাজনক স্থান চিহ্নিত করতে থাকে। একইদিন মধ্যরাতে সিংগারদিঘীর (হাসিখালী ব্রিজ) এলাকায় ওই সড়কের গাছ ফেলে পথচারীদের দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে গণডাকাতি করতে থাকে।
খবর পেয়ে শ্রীপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে ডাকাত দলের সদস্যরা টের পেয়ে তাদের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে। ডাকাতের হামলায় দুই পুলিশ সদস্য কনস্টেবল রুহুল আমিন এবং সেলিম মিয়া গুরুতর আহত হয়। খবর পেয়ে শ্রীপুর থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ডাকাত দলের সদস্যরা পালিয়ে যায়। এ সময় এক ডাকাত সদস্য রুবেল গাড়ির সঙ্গে পায়ে আঘাত পেয়ে আহত হয়। পরে ডাকাত সদস্য রুবেলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাত চক্র। এই দলে ৮-১০ জন সদস্য রয়েছে। ইসমাইলের নেতৃত্বে তারা রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাসা বাড়ি ও দোকান ডাকাতির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এ ডাকাত দল দীর্ঘদিন যাবত নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষা নদীতে বিভিন্ন বালুর বলগেটে ডাকাতি করতো বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা বিভিন্ন সময় কারাগারে থাকা অবস্থায় আন্তঃজেলা ডাকাতদের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে পরিচয়ের ডাকাতির বিষয়ে বিভিন্ন কৌশল শিখে নিতো। পরবর্তীতে তারা জামিনে বেরিয়ে কারাগারে থাকা ডাকাতদের কৌশল ব্যবহার করে ডাকাতি করতো বলে জানান।
র্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তার ইসমাইল ১০-১২ বছর যাবৎ একটি কেমিক্যাল কোম্পানির মালামাল রাজধানীর মিটফোর্ড মার্কেটে সরবরাহ করতো। তিনি ২০১৮ সালে কেরানীগঞ্জ এলাকার এক ডাকাত সদস্যের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তিনি ওই মার্কেটে কেমিক্যাল সরবরাহের পাশাপাশি কেরানীগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় ডাকাতি করতেন।
ইসমাইল ডাকাতির কার্যক্রমে সুবিধার জন্য ছদ্মবেশে ইজিবাইক চালানো শুরু করে। তার বিরুদ্ধে ঢাকার দোহার, কেরানীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ এলাকায় ডাকাতির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় ৪টি ডাকাতি মামলা রয়েছে। ওইসব মামলায় তিনি এক বছরের অধিক কারাভোগ করেছেন বলে স্বীকার করে। তার নেতৃত্বে ২০২৩ সালে ফরিদপুরে বেশ কয়েকটি স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি সংঘটিত হয়। স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি মামলায় তিনি ৭ মাস কারাভোগের পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জামিনে বের হয়ে পুনরায় ডাকাতি কার্যক্রম করতে থাকে।
গ্রেপ্তার হানিফ মাস্টার ইসমাইল ডাকাতের সহযোগী। তিনি ২০১১ সালে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত হন। তিনি ডাকাতির বিভিন্ন স্থান নির্ধারণ, কৌশল ও পরিকল্পনা করতেন। ডাকাতির পরিকল্পনায় অত্যন্ত বিচক্ষণ থাকায় তিনি আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের কাছে তার মাস্টার উপাধি ছিল এবং সবাই তাকে মাস্টার বলে জানতো। তিনি ২০১৩ সালে হত্যা মামলায় ২ বছরের অধিক সময় কারাভোগ করে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে এবং সকল মামলায় কারাভোগ করেছেন।
গ্রেপ্তার ডাকাত কামরুল ইসমাইলের সঙ্গে ৩-৪ বছর আগে রাজধানীর জিনজিরা এলাকায় ভাড়া থাকার সময় পরিচয় হয়। পরে ডাকাতি কার্যক্রম আড়াল করতে তিনি দিনে রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। তিনি গাজীপুর এলাকায় ডাকাতির জন্য সুবিধাজনক বিভিন্ন স্থান সম্পর্কে ডাকাত সর্দার ইসমাইল এবং হানিফ মাস্টারকে আগাম তথ্য দিতেন। তিনি গাজীপুর এলাকায় ডাকাতির পূর্বে পরিকল্পনা করার জন্য বিভিন্ন সময় গাজীপুর থেকে জিনজিরায় ইসমাইল ও হানিফের কাছে আসতেন। পরিকল্পনা শেষে তিনি গাজীপুরে ফিরে পরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করতেন।
শ্রীপুর থানার ওসি শাহ জামান জানান, শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত গ্রেপ্তার ৩ ডাকাতকে থানায় সোপর্দ করেনি র্যাব। থানায় সোপর্দের পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদেরকে আদালতে পাঠানো হবে।
ইএইচ