আর্ত-মানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মধ্যেই রয়েছে জীবনের সার্থকতা। জীবনের উদ্দেশ্য শুধু নিজেকে নয় বরং উদ্দেশ্য হওয়া উচিত অন্যকে সুখী করা। কথায় আছে, পৃথিবীতে দান করে কিংবা মানবসেবা করে কেউ কখনো গরীব হয়নি, বরং গরীব মানসিকতার মানুষরাই কখনো কারো জন্য কিছু করতে পারেনি। সেই মানুষগুলোই সবচেয়ে সুখের কাছাকাছি যেতে পেরেছে, যারা নিজেদেরকে আর্ত-মানবতার সেবায় বিলিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। নিজের জন্য নয় বরং সমাজ ও মানুষের সেবা করার মাঝেই সবচেয়ে বড় আনন্দ। আর সেই আনন্দই যেন খুঁজে পেয়েছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ভিতরচর গ্রামের একঝাঁক তরুণ।
সমাজের অবহেলিত, দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে এগিয়ে নিতে প্রাতিষ্ঠানিক সমাজকর্মের ভূমিকা অপরিসীম। মহান সেই উদ্দেশ্য নিয়েই ২০২২ সালে তরুণ দল নিজেদের প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছে ‘ভিতরচর পশ্চিমপাড়া মানবকল্যাণ সংগঠন’। সাংগঠনিক কার্যক্রমের শুরুটা নিজ এলাকায় হলেও এখন তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে গোটা উপজেলায়। ধীরে ধীরে পুরো কুমিল্লা জুড়ে আর্থ-মানবতার সেবায় কাজ করতে চায় সংগঠনটি। চৌদ্দগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনার মধ্য দিয়ে ইতোমধ্যেই আলোচনায় উঠে এসেছে সংগঠনটি। শিশু কল্যাণ, যুব কল্যাণ, শারীরিক ও মানসিক ভাবে অসমর্থ ব্যক্তিদের কল্যাণ, পুনর্বাসন, দুস্থদের কল্যাণ, দরিদ্র রোগীদের সেবাসহ বিভিন্নভাবে মানবকল্যাণে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছে সামাজিক এই সংগঠনটি।
সম্পর্ক উন্নয়নের সমন্বিত প্রয়াস- শ্লোগানকে সংগঠনের প্রতিটি সদস্যের অন্তরে ধারণ করে মূলত করোনাকালীন সময়ে সমাজের অসহায়-দুস্থ মানুষের দুঃখ-কষ্টের চিত্র দেখেই সংগঠনটির সৃষ্টি। এরপর থেকেই ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষর, ভিক্ষুকমুক্ত ও বৈষম্যহীন একটি আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে তারা। এছাড়া কর্মহীন ও দরিদ্রদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, বাল্যবিয়ে রোধ, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, নারী সমাজকে আত্মনির্ভরশীল, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি এবং গৃহহীনদের গৃহনির্মাণসহ সব ধরনের সেবামূলক কর্মকাণ্ডের জন্যই যেন সংগঠনটির জন্ম।
তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠার পর থেকে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়ন আর ব্যক্তিগত উদ্যোগে অর্থাৎ কোনো রকম সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক অনুদান ছাড়াই স্বল্প সময়ে দেড় লাখ টাকারও বেশি অনুদান বিতরণ করেছে সংগঠনটি। অনুদান পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বেশিরভাগই অসুস্থ এবং গরীব মানুষের বাসস্থানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন। এছাড়া প্রতি রমজানেই বিতরণ করা হয়ে থাকে ইফতার সামগ্রী। এবারও সমাজের প্রায় অর্ধশতাধিক গরীব-অসহায় মানুষের মধ্যে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেছে সংগঠনটি। গত দুই বছরও একইভাবে ইফতার সামগ্রী ও ঈদ উপহার পৌঁছে দেয়া হয় গরীব-অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে।