ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকা ২টি অভয়াশ্রমে চলছে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা। এর মধ্যে ইলিশা থেকে মনপুরার চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার এবং ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী জেলার চর রুস্তম পর্যন্ত তেতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকা নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। এসব পয়েন্টে বৈধ অবৈধ সব ধরনের জাল ফেলা নিষিদ্ধ।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা মৎস্য অফিস।
ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়ায় পহেলা মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস ইলিশসহ সকল প্রকার মাছ ধরা, বিক্রি, ক্রয় ও পরিবহন নিষিদ্ধ থাকলেও সদর উপজেলার নাছির মাঝি ঘাটে হাক-ডাক ও উৎসবমুখর পরিবেশে এক দিনে ১৬ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন বলে জানান কয়েকজন মৎস্য আড়তদার। এসব করা হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে মাছ ধরছে জেলেরা। নদীতে চলছে মাছ ধরার মহোৎসব। দাম চড়া হওয়াতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ শিকারে জেলেরা, আর বিক্রিও হচ্ছে প্রকাশ্যেই।
জানা যায়, রমজানের শুরুতে নদীর মাছের চাহিদা একটু বেশি, আর তাই ইলিশের দামটাও থাকে বেশ চড়া। তাই অভিযানের কিছুটা শিথিলতা দেখলেই জাল হাতে নেমে পড়ে মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর জেলেরা।
যদিও মার্চ ও এপ্রিল দুইমাস মেঘনা এবং তেতুলিয়া নদীতে ইলিশসহ সকল ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু এসব অমান্য করে প্রতিদিন শত শত নৌকা আর ট্রলার নিয়ে দিনের বেলাতেই প্রকাশ্যে মাছ ধরে যাচ্ছেন জেলেরা।
ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায় শত শত জেলে নৌকা নিয়ে মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই সময়টাতে মাছ ধরার উপর সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তা বুঝার কোন উপায় নেই। জেলেদের আনাগোনা এতটাই বেশি যে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা চলছে তা বোঝার কোনো উপায় নেই এবং তা মানার কোন লক্ষণ দেখা যায়নি।
অথচ ভোলার ইলিশা মেঘনা নদীর পাড়ে রয়েছে কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশের দুটি হাইস্পিড বোর্ড। নদীতে কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ এবং মৎস্য অফিসের অভিযান একটু শিথিল বলে অভিযোগ রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার প্রথম কয়েকদিন জেল জরিমানা করা হলো এখন চলছে তা ঢিমেতালে।
একই অবস্থা মাছ ঘাটগুলোর। সেখানে প্রকাশ্যেই হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি হচ্ছে এসব মাছ। শুধু তাই নয় এসব বিষয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জানালেও তারা রীতিমতো এড়িয়ে যাচ্ছেন। অথচ এসব কাজের জন্য কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ ও মৎস্য অফিস থাকলেও তাদের তেমন দেখা মিলছে না।
যদিও নিষেধাজ্ঞাকালীন নিবন্ধিত জেলেদের প্রত্যেকের জন্য ৮০ কেজি করে চাল দেয়ার কথা, কিন্তু সব জেলে পাবেন না। কারণ, সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ এসেছে মাত্র ৮৯ হাজার। কিন্তু জেলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে এক লাখ ৫৮ হাজার।
নিষেধাজ্ঞার মধ্যে অবাধে ইলিশ ধরা, বিক্রি ও পরিবহনের বিষয়ে জানতে সহকারী মৎস্য অফিসার আয়েশা খাতুন ও মেরিন অফিসার রবিউল ইসলামের মুঠোফোনে ফোন দিলে তারা ফোন রিসিভ করেননি।
কোস্ট গার্ডের মিডিয়া সেলে ফোন দিয়েও তাদের কাউকে পাওয়া না যায়নি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন অমান্য করলে কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড হতে পারে। সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।
তিনি আরও জানান, জনবল সংকটের কারণে আমাদের অভিযান পরিচালনা করতে একটু বেগ পেতে হচ্ছে, অভয়াশ্রমে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকার সময়ে মাছ ধরা বন্ধে প্রচার চালাচ্ছে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ।
ইএইচ