যশোরের অভয়নগরে চাঞ্চল্যকর যুবলীগ নেতা মুরাদ হোসেনকে হত্যার ছক আঁকা হয় নওয়াপাড়া গ্রামের মাঠের ভিতরের একটি নারিকেল বাগানে বসে। এখান থেকে বণ্টন করা হয় হত্যার মিশনে অংশগ্রহণকারীদের দায়িত্ব। হত্যার আগে এই নারিকেল বাগানে বসেই একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
যেখানে প্রতিটি বৈঠকে দিকনির্দেশনা দেন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থের যোগানদাতা। মুরাদ হত্যাকাণ্ডে আটক তিন আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে এ তথ্য জানিয়েছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এ কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারীরা প্রত্যেকে অগ্রিম হিসেবে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে পেয়েছেন বলে আদালতকে দেয়া জবানবন্দিতে জানিয়েছেন। পরবর্তীতে আরও টাকা পরিশোধের চুক্তি হয় মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থের যোগানদাতার সাথে। তবে পরবর্তীতে কতটাকা পরিশোধের কথা ছিল তা জানা যায়নি।
শুক্রবার আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যার ঘটনায় নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গ্রেপ্তারকৃত তিন আসামি জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
এদিন যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম কিবরিয়ার গ্রেপ্তার আল আামিন শেখ ও রনি ব্যাপারি এই জবানবন্দি প্রদান করেন। এর একদিন আগে আসামি সাগর কাজী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার দালালের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন।
এ প্রসঙ্গে অভয়নগর থানায় প্রেস ব্রিফিংয়ে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল-খ) জাহিদুল ইসলাম সোহাগ জানান, স্থানীয় সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে ঘটনায় জড়িত আসামিদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস এই হত্রাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে পুলিশকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। সময় লেগেছে এক মাস। ঘটনার সময় স্থানীয় সিসিটিভি ফুটেজে ঘটনাস্থল থেকে একটি ভ্যানকে চলে যেতে দেখা যায়। যদিও ভ্যান চালকের মুখটা ছিল অনেকটাই অস্পষ্ট। এ সূত্র ধরেই পুলিশ ওই ভ্যানচালককে খুঁজতে থাকে। আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ ওই ভ্যান চালককে খুঁজে পায়। ভ্যান চালককে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে মুরাদ হত্যার সহস্যের জট খুলতে শুরু করে।
ভ্যানচালকের দেয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার আরও জানান, মুরাদ হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও ক্ষমতার পালাবদলে একটি পক্ষ মুরাদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ও ইনফর্মা নিয়োগ করে। ইনফর্মার তথ্য পেয়ে হত্যা মিশনে অংশগ্রহণকারীরা এলাকার এক নিরীহ ভ্যানচালককে স্থানীয় একটি দোকানের সামনে আসতে বলে। দাওয়াত খেতে যাওয়ার কথা বলে ভান চালককে ওই দোকানের সামনে নিয়ে অপেক্ষায় থাকে। কিছুক্ষণ পরে মুখে মাস্ক পরিহিত ধারালো অস্ত্রে সজ্জিত হত্যা মিশনের ৫ সদস্য ওই ভ্যানে চড়ে। এ সময় চালক যেতে রাজি না হলে তাকেও হত্যার হুমকি দেয়। পরে বাধ্য হয়ে ভ্যানচালক তাদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। তারা ভ্যান থেকে নেমেই বাড়ির সামনে সড়কের উপর মুরাদকে কোপাতে শুরু করে। ভয়ে ভ্যান চালক দ্রুত সেকান থেকে সরে পড়ে।
ইএইচ