রমজানের পবিত্রতাকে সম্মান জানিয়ে মিষ্টি, দই, ঘিসহ সকল পণ্যে বিশেষ মূল্য ছাড় দিয়েছেন অভিজিৎ ঘোষ নামে এক মিষ্টি ব্যবসায়ী। রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে যেখানে পণ্যের মূল্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় সেখানে ভিন্ন ধর্মের অনুসারী হয়েও রজমান উপলক্ষে এমন ছাড় দেওয়ায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
রোববার দুপুরে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নড়িয়া বাজারের পূর্ব মাথার মিষ্টি কানন নামে একটি দোকানে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাজারের বণিক সমিতি ও ক্রেতাদের সূত্রে জানা গেছে, রমজানে ক্রেতাদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান, বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণার পরেও এসব ব্যবসায়ীরা কিছুতেই পণ্যের দাম কমাতে রাজি হোন না। সেখানে নিজের উদ্যোগে রমজানের পবিত্রতাকে সম্মান জানিয়ে মিষ্টি কাননের মালিক অভিজিৎ ঘোষ তার দোকানের সকল পণ্যের দাম কমিয়ে সীমিত লাভে বিক্রি করছেন। ভিন্ন ধর্মের অনুসারী হয়েও পণ্যের দাম কমিয়ে দেওয়ায় ক্রেতাসহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই দোকান মালিক অভিজিৎ ঘোষকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
দোকানটির পরিচালক অজিত কুমার ঘোষ বলেন, রমজান উপলক্ষে দোকান মালিক দোকানের সকল পণ্যের মূল্য কমিয়ে দিয়েছেন। রমজানের আগে দই ২০০ টাকা, ঘি ১ হাজার ৬০০ টাকা, সাদা ও কালোজাম ২২০ টাকা, চমচম ৩৫০ টাকা, সন্দেশ ৬৫০ টাকা, কাচা গোল্লা ৫৫০ টাকা, ক্ষীরপুরী ৬০০ টাকা, রসগোল্লা ২৬০ টাকা, রস মালাই ৪৫০ টাকা, সর মালাই ৬০০ টাকা, মাঠা ১৫০ টাকা, বোম্বে রোল ৬০০ টাকা বিক্রি করতাম।
রমজান উপলক্ষে দই ১৮০ টাকা, ঘি ১ হাজার ৪০০ টাকা, সাদা ও কালোজাম ২০০ টাকা, চমচম ২৮০ টাকা, সন্দেশ ৫৫০ টাকা, কাচা গোল্লা ৪৫০ টাকা, ক্ষীরপুরী ৫২০ টাকা, রসগোল্লা ২২০ টাকা, রস মালাই ৩৫০ টাকা, সর মালাই ৫৫০ টাকা, মাঠা ১২০ টাকা, বোম্বে রোল ৫৫০ টাকা বিক্রি করি।
ক্রেতা মো. কাউসার বলেন, রমজান উপলক্ষে মিষ্টি কানন বিশেষ ছাড় দিয়েছে। ভিন্ন ধর্মের অনুসারী হয়েও রমজানের প্রতি যে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তারা, তা বিরল। কেন না আমরা দেখতে পাই রমজানকে পুঁজি করে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেন। অভিজিৎ ঘোষ নামে এই দোকানির জন্য আমি দোয়া করি। তার উছিলায় অনেক গরীব মানুষ ভালো কিছু পণ্য খেতে পারবেন।
মিষ্টি কাননের মালিক অভিজিৎ ঘোষ বলেন, রমজান ইসলাম ধর্মানুসারীদের জন্য পবিত্র একটি মাস। এই মাসে সকলেই রোজা থাকেন। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে রমজানে সাধারণ মানুষের কষ্ট হয়। রমজানের পবিত্রতাকে সম্মান জানিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছে থেকেই দোকানের সকল পণ্যের দাম ৫০ থেকে ১০০ টা পর্যন্ত কমিয়ে দিয়েছি। সীমিত লাভে কর্মচারীদের বেতন ও দোকান খরচ দিয়ে আমার মোটামুটি লাভ হবে। যে লাভ হবে, তাতেই আমি খুশি।
নড়িয়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও নড়িয়া বাজার বণিক সমিতির সদস্য সচিব জাফর শেখ বলেন, মিষ্টি কাননের মালিক হিন্দু ধর্মের অনুসারী। রমজানের পবিত্রতাকে সম্মান জানিয়ে তিনি তার দোকানের সকল পণ্যে বিশেষ ছাড় দিয়েছেন। তার এই কাজটি মহৎ একটি কাজ। আমরা মুসলমান হয়েও সিন্ডিকেট তৈরি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেই, সেখানে একজন অভিজিৎ উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। তার এই মহৎ কাজটিকে আমি সাধুবাদ জানাই। তার জন্য দোয়া করি।
ইএইচ