ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ও খিলগাঁও এলাকা থেকে ইজিবাইক চোর চক্রের মূলহোতা কমল চন্দ্রসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তারের সময় তাদের হেফাজত থেকে ৬টি চোরাই ইজিবাইক উদ্ধার করা হয়েছে।
রোববার কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরের নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক অ্যাডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থানার আহসানবাগ সিলেটি বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. শাহ কামাল (১৮) একজন ইজিবাইকচালক। তিনি দীর্ঘদিন থেকে কামরাঙ্গীরচর ও চকবাজারসহ আশপাশের এলাকায় ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। গত ১২ মার্চ আনুমানিক রাত সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর নিউ মার্কেট থেকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তার ইজিবাইকে যাত্রী হিসেবে উঠে বকশি বাজার মোড়ে যেতে বলে। কামাল তাকে নিয়ে চকবাজার থানার বকশিবাজার মোড়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বকশিবাজার মোড়ে পৌঁছালে অজ্ঞাত ব্যক্তি কামালকে কার্পেট ক্রয় করে লালবাগ থানার সেকশন এলাকায় যাবে এবং বিনিময়ে অধিক ভাড়া দেবে বলে আশ্বস্ত করে।
তার কিছুক্ষণ পর ওই ব্যক্তি কামালকে তার ইজিবাইকটি মেইন রোডে রেখে বকশিবাজার মোড়ের তেজপাতা গলিতে যেতে বলে। কামাল সরল বিশ্বাসে তার ইজিবাইকটি মেইন রোডের পাশে রেখে ওই ব্যক্তির সঙ্গে কার্পেট বহন করে নিয়ে আসার জন্য তেজপাতা গলিতে যান। তখন ওই ব্যক্তি ভিকটিম কামালের মোবাইল নম্বর নিয়ে তাকে ফোন করবে বলে একটি বাসার গেটের সামনে অপেক্ষা করতে বলে কৌশলে সটকে পড়ে। কামাল বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর ওই ব্যক্তির কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে তার ইজিবাইকের কাছে গিয়ে দেখেন সেটি নেই। তখন তিনি বুঝতে পারে ইজিবাইকটি চুরি হয়েছে।
কামাল তার উপার্জনের একমাত্র সম্বল ইজিবাইকটি হারিয়ে নিরুপায় হয়ে র্যাবের দ্বারস্থ হন। র্যাব-১০ এর অধিনায়ক বরাবর ইজিবাইক চুরির ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দেন। অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল ইজিবাইকটি উদ্ধার ও ইজিবাইক চোর চক্রকে গ্রেপ্তারের লক্ষে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এরপর আশপাশের বিভিন্ন সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই শেষে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে র্যাব-১০ এর একটি দল তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইজিবাইক চোর চক্রের অন্যতম হোতা কমল চন্দ্রকে (৩৭) গ্রেপ্তার করে।
পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চক্রের সদস্য মো. আলমগীর মোল্ল্যা (৫০), নূর মোহাম্মদ (২৪) ও শ্রী চন্দন চন্দ্র সূত্রধরকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়। একই দিন রাতে রাজধানী ঢাকার খিলগাঁও থানার মেরাদিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে চোরাই ইজিবাইক ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত পনির হোসেন শান্তকে (২৫) গ্রেপ্তার ও তার গ্যারেজ থেকে কামালের চুরি হওয়া ইজিবাইকটি উদ্ধার করা হয়।
পনির হোসেন শান্তর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী র্যাব-১০ এর দলটি ওই রাতে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের অভিযান চালিয়ে আরও চার জনকে গ্রেপ্তার করে।
তারা হলেন- মো. হাফিজুল ইসলাম (৩৫), মো. আবু সাঈদ (৩২), মো. রানা মিয়া (৩০) ও মো. মোতালেব (৪২)। তাদের কাছ থেকে চোরাই দুটি মিশুক, দুটি ইজিবাইক ও একটি অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক চুরি, মাদক ও মারামারির মামলা রয়েছে।
ইএইচ