হরিণাকুণ্ডুতে অনুমোদন ছাড়াই চলছে অবৈধ ইটভাটা

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২৪, ০৪:২৮ পিএম

ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের অনুমোদন বিহীন অবৈধ ইটভাটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। ভাটা মালিক সমিতির তদবিরে দিনের পর দিন চলে আসছে এসব অবৈধ ইটভাটা।

কীভাবে চলছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জেলা সচেতন মহলের মাঝে। জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় তাদের দিকেও প্রশ্ন উঠছে।

জানা যায়, হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় মোট ১৮টি ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে ৮ নং চাঁদপুর ইউনিয়নে ১ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে গড়ে উঠেছে ৫টি অবৈধ ইটভাটা। সড়কের পাশে ফসলি জমি ঘেঁষে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হান্নান আলী খাঁর এমএসবি ব্রিকস, বাবুল হোসেন খানের আরএসবি ব্রিকস, আলমগীর হোসেনের আনিশা এন্ড তানিশা বিক্রস, শিতলী পাড়া হাকিমপুর এলাকায় মিলন এন্ড জান্নাত ব্রিকস, পারমথুরাপুর এলাকায় এ.জে.বি ব্রিকস নামে ইটভাটা রয়েছে। যেগুলোর অধিকাংশরই নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স। তবুও অবৈধ ইট ভাটার ব্যবসা চলছে রমরমা।

সরেজমিনে এম.এস.বি ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, আম, জাম, রেইনট্রি, কদম, কাঁঠাল, খেজুর, নারকেলসহ সবুজ বনায়ন ধ্বংস করে শত শত মণ বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছের কাঠ মজুদ করা হয়েছে। কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে বাঁশের মোথা ও খেজুর গাছসহ অন্যান্য জ্বালানি কাঠ। ফলে চুল্লি থেকে অনবরত বের হচ্ছে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া। এছাড়াও ফসলি জমির টপসয়েল কেটে স্তূপ করা হয়েছে।

স্থানীয় কৃষক ও একাধিক বাসিন্দারা জানান, খেতের পাশে ইটভাটা গড়ে ওঠায় ধুলোবালিতে ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে। ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এছাড়াও ইটভাটার নিজস্ব মাটিভর্তি ট্রাক্টর চলাচলের কারণে সরকারের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তাগুলো ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে প্রায়ই ঘটছে নানান দুর্ঘটনা।

এম.এস.বি ইটভাটার পাশে বসবাসরত আব্দুর রাজ্জাক জানান, এই ইটভাটায় দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা গাছের কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। যার কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হচ্ছে চারপাশ। তিনি আরও বলেন, আমার বৃদ্ধ মা শ্বাসকষ্টে ভুগতে শুরু করেছে।

আক্কাস আলী নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ইটভাটার ধুলোবালিতে ঘরবাড়িতে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তিনি এই সকল অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করার দাবি জানান।

ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের বিষয়ে কথা হয় হরিণাকুণ্ডু ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হান্নান আলী খাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, শুধু ঝিনাইদহে না সারা দেশেই অবৈধ উপায়ে ইটভাটা পরিচালিত হচ্ছে। আপনারা পারলে ইটভাটা বন্ধ করে দেন। স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে সুসম্পর্ক থাকায় ওই ভাটায় অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এই বিষয়ে ফোনে কোনো বক্তব্য দিতে পারবো না।

অবৈধ ইটভাটা পরিচালনার বিষয়ে ঝিনাইদহ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুন্তাছির রহমান জানান, হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় এ পর্যন্ত মোট ৮টি ভাটায় ২১ লাখ টাকা জরিমানা করেছি এবং অভিযান অব্যাহত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় মোট ১৮টি ইটভাটা রয়েছে যাদের কারোরই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। মূলত আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে অভিযান পরিচালিত করতে হয় যে কারণে কিছুটা সময় লাগে। তবে পর্যায়ক্রমে সকল অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হবে।

ইএইচ