হাটহাজারীতে মাটি কাটার মহোৎসব, সাংবাদিককে দেখে নেওয়ার হুমকি

মো. সাহাবুদ্দীন সাইফ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৪, ০২:৫৬ পিএম
ছবি: আমার সংবাদ

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে প্রায় প্রতিদিনই চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। পাহাড়ের মাটি কিংবা কৃষিজমির টপসয়েল, কোনোটাই বাদ দিচ্ছেনা মাটি খেকো অসাধু চক্রটি। এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকার সচেতন ব্যক্তিরা।

তাদের টাইমলাইনে মাটি খেকোদের নাম প্রকাশ না করলেও ব্যবসার উদ্দেশ্যে কৃষিজমি কিংবা পাহাড় থেকে মাটি কেটে ড্রাম ট্রাকের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়ার সময় সড়কের উপর মাটি পড়ে প্রলেপ সৃষ্টি হয়, এতে সড়কে যান চলাচলে ঝুঁকি থাকে। এছাড়া কৃষিজমির টপসয়েল কাটায় জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। বিষয়গুলো উল্লেখ করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন এবং গণমাধ্যমকে দোষারোপ করছে তারা।

অথচ মাটি কাটার সংবাদ পেলে প্রায়সময়ই ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযান পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসন। তবে অধিকাংশ ঘটনাস্থলে প্রশাসন পৌঁছার আগেই মাটি খেকোরা অদৃশ্য হয়ে যায়, যার কারণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় বিড়ম্বনায় পড়ছেন উপজেলা প্রশাসন, যেন চোর-পুলিশ খেলা চলছে।

অপরদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অনেক স্থানে বাধা দিতে গেলেও মাটি খেকোরা প্রভাবশালী হওয়ায় তেমন কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেনা। তাই বাধ্য হয়ে সাধ্যমতো উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করে রোধ করার চেষ্টা করছে জনপ্রতিনিধিরা।

অপরদিকে অভিযুক্তদের কাছে জানতে চাইলে তারা মিডিয়াকে দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করে। কখনো স্থানীয় এমপি আবার কখনো উপজেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি নেয়ার কথা বললেও খোঁজ নিয়ে দেখা যায় সম্পূর্ণ মিথ্যা। মূলত তাদের নাম ভাঙিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করে তারা।

সম্প্রতি উপজেলার গুমানমর্দ্দন ইউনিয়নে এম এস অ্যাগ্রো ফার্মের সাইনবোর্ড লাগিয়ে মাছের প্রজেক্ট ও বাগানের নামে কৃষিজমির টপসয়েল কেটে বিশাল আকারের পুকুর খনন করেছে। খনন কাজে ব্যবহার করা হয়েছে দুইটি এস্কেভেটর।

সরেজমিনে গেলে নুরুল আবছার নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি প্রতিবেদককে প্রজেক্টের বিষয় নিশ্চিত করে বলেন, স্থানীয় এমপি ও প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। কে এই জমির মালিক জানতে চাইলে আলমগীর নামে এক ব্যক্তি বলে প্রতিবেদককে তার মোবাইল নাম্বার দিন। তবে অনুমতির কাগজপত্র চাইলে দিবেন বললেও পরে আর দিতে পারেনি।

কয়েকজন সাংবাদিক বিষয়টি জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.বি.এম. মশিউজ্জামান বলেন, তাদের কোন অনুমতি দেয়া হয়নি, থানার ওসিসহ ঘটনাস্থলে দুইবার অভিযান চালানো হয়েছে, কিন্তু কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি। এমপি কিংবা প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে তারা আমাদের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে। কৃষি কর্মকর্তার সাথে কথা বলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কৃষিজমির টপসয়েল কাটায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হবে।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কাছে জানতে চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন নুরুল আবছার। সাংবাদিকদের প্রতিবেদনের কারণে কোন ক্ষতি হলে প্রতিবেদককে দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করে।

হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নিজেকে একসময়ের সাংবাদিক দাবি করে বলেন, কেন বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করতেছেন। আমরা তো একই পেশার লোক। প্রতিবেদনের কারণে কোন ক্ষতি হলে প্রতিবেদককে ছাড় দিবোনা। এসময় তিনি কিছু সাংবাদিককে টাকা দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন।

সাংবাদিককে হুমকির বিষয়টি শুনে অন্যান্য সাংবাদিকরা বিস্মিত হন। তারা প্রতিবাদ করে বলেন চোরের মা‍‍`র বড় গলা।

এদিকে শুক্রবার দুপুরে কৃষি জমির টপসয়েল কাটায় মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া এলাকায় কামাল ও আলম নামে দুই ব্যক্তিকে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী এক লাখ টাকা জরিমানা করে উপজেলা প্রশাসন।

এআরএস