ঈদ আনন্দ ছোঁয়নি বরিশালের ‘মান্তা’ শিশুদের

বরিশাল ব্যুরো প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২৪, ০৪:৩৫ পিএম

প্রতি বছর মুসলমানদের ঘরে ঈদ আনন্দ আসে আবার চলে যায়। কিন্তু বরিশাল সদর উপজেলার সাবেরহাট ইউনিয়নের লাহারহাট ফেরিঘাট এলাকায় বসবাসরত মান্তা পরিবারের অসহায় শিশুদের ঈদ আছে কিন্তু নেই তাদের আনন্দ।

প্রায় ২ শতাধিকের বেশি মান্তা শিশু রয়েছে এ এলাকায়। তাদের প্রতি তাকিয়ে দেখারও যেন কেই নেই। তাদের ঈদ আনন্দের কথাও কারো ভাবনায় নেই। কেই জানতেও চায় না কীভাবে কাটে তাদের ঈদ আনন্দ। ঈদে সবাই পরিবারের সকলকে নিয়ে ঈদের আনন্দ খুশি খাগাভাগি করে নেবে। নতুন পোশাক পড়ে আনন্দ ভাসবে। কিন্তু মান্তা পরিবারের শিশুরা কোথায় পাবে নতুন কাপড়।

শুধু তাই নয় নিজেরা কোনোভাবে জীবন পার করলেও ছেলেমেয়েদের নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। তবে বরিশাল জেলার মান্তা পরিবারগুলোকে ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তাদের স্থায়ীভাবে আশ্রয় প্রকল্পের আওতায় আনা হবে ও এবার ঈদে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহায়তা করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

মান্তা সম্প্রদায়ের শিশুরা সারাদিন খেলাধুলা ও এদিক সেদিক ঘুরেফিরে দিন পার করছে। কেউ কেউ নদীতে লাফিয়ে পড়ে গোসল করছে, আবার কেউ নৌকা নিয়ে নদীতে নেমে পড়েছে মাছ ধরতে। এভাবেই চলছে তাদের শৈশবকাল।

মান্তা পরিবারের সদস্যরা আমার সংবাদকে বলেন, সারা বছরই দুবেলা পেট ভরে খেতে পাওয়াই তাদের এক পরম সৌভাগ্য। সেখানে তাদের নতুন জামা কাপড় স্বপ্নের মত। তাদের কাছে ঈদ যেন নতুন চাঁদ দেখার মাঝেই সীমাবদ্ধ। ঈদের দিন আর বছরের অন্যান্য দিন প্রায় এক। তাই নতুন কাপড় দেওয়ার মত সাম্যার্থ নেই। শুধু তাই নয় তাদের নেই কোন স্থায়ী ঠিকানা। নেই কোন ঘর-বাড়ি। নদীই হলো তাদের আপন ঠিকানা।

মান্তা পরিবারের শিশুরা হতাশা জড়িত কণ্ঠে আমার সংবাদকে বলেন, আমরা গরিব তাই আমাদের নতুন কাপড় দেয়ার কেউ নেই। বাবার আয়ে সংসার চলে না। ঈদে নতুন কাপড়ও দিতে পারে না। তাই আমাদের ঈদ আনন্দ হয় না। আমরা মান্তা তাই নতুন পোশাক নেই। পুরাতন কাপড় দিয়েই প্রতিবছর কাটিয়ে দেই খুশির ঈদ। ঈদে সেমাই বা ফিন্নি বা ভালো কোন খাবার কিছুই জুটে না আমাদের কপালে।

বরিশাল দুপ্রক সভাপতি প্রফেসর শাহ সাজেদা বলছেন, মান্তা পরিবারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যেসব সাহায্য সহযোগী রয়েছে সেগুলো যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন সচেতন মহল। তাই উসৎবের সময় বিশেষ ব্যবস্থা করা ও তাদের স্থানীয় বাসস্থান করে দেওয়ার  আহ্বান জানিয়েছেন।

বরিশাল জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক একেএম আখতারুজ্জামান তালুকদার বলেন, বর্তমান সরকারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মান্তা সম্প্রদায়য়েরকে পুনর্বাসনের আওতায় আনা হবে।

তিনি আরও বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে মান্তাদের তালিকা কারা হচ্ছে। খুব শিগগিরই তাদের পুনর্বাসনের আওতায় আনা হবে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহাবুব উল্লাহ মজুমদার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে মান্তা পরিবারসহ সকল অসহায় পরিবারদেরকে পুনর্বাসনের আওতায় আনা হবে ও পাশাপাশি ঈদে সরকারিভাবে সকলকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে মান্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদের স্থায়ী বসবাসের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। যারা আগ্রহী রয়েছে তাদেরকে আমরা পুনর্বাসন করে দিবো। এবং ঈদের সরকারের পক্ষ থেকে অনেক মান্তা পরিবারকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

ইএইচ