মে দিবসে টাঙ্গাইলে আ.লীগের দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ২, ২০২৪, ০১:৫৩ পিএম

টাঙ্গাইলে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শাক্তির মহড়া দিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান মে দিবস পালন করা হয়েছে।

বুধবার দুপুরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ আলাদা শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে পৃথক স্থানে মহান মে দিবসের কর্মসূচি পালন করে।

কিন্তু দুই পক্ষের কর্মসূচিতে শ্রমিকদের প্রাধান্য ছিল না, নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতিতে ছিল শক্তি প্রদর্শন।

দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে জেলা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করছে। এরমধ্যে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা এক পক্ষ। এ গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে‘বিদ্রোহী’ স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা অপর পক্ষে। এ গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের)।

টাঙ্গাইল জেলায় সংসদীয় আসন আটটি। গত সংসদ নির্বাচনে এর মধ্যে একটি আসনে (টাঙ্গাইল-১) বিদ্রোহী দলীয় প্রার্থী ছিল না। বাকি সাতটি আসনে দলীয় প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করেছেন। যার মধ্যে তিনজন নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

পাঁচটি আসনে নৌকার প্রার্থী জয় পেয়েছেন। সাতটি আসনে বিদ্রোহী স্বতন্ত্র সাত প্রার্থীর মধ্যে ছয়জনেরই প্রতীক ছিল ঈগল। একটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতীক ছিল ট্রাক (টাঙ্গাইল-৪ আসনে বিজয়ী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী)। জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান বিরোধটি নৌকা বনাম ঈগলের বিরোধ হিসেবে জেলায় বেশি আলোচিত হচ্ছে।

নৌকা সমর্থকরা জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের ব্যানারে শহরের কেন্দ্রস্থল শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে মহান মে দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়। একই স্থানে সমাবেশের আহ্বান করে ‘ঈগল’ সমর্থক অংশের আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা পৌর শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করে। প্রশাসন কোনো পক্ষকেই পৌর উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি। পরে তারা উভয় পক্ষই আলাদা আলাদা স্থানে সমাবেশ করে।

শহরের শিবনাথ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুকের নেতৃত্বাধীন জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে মহান মে দিবসে শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি। সমাবেশের উদ্বোধক ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুক।

জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বালা মিয়ার সভাপতিত্বে ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনির এমপির সঞ্চালনায় ওই সমাবেশে বক্তব্য দেন, সংসদ সদস্য অনুপম শাহজাহান জয়, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খন্দকার আশরাফউজ্জামান স্মৃতি, ডা. মো. কামরুল হাসান খান, আনিসুর রহমান, যুগ্ম-সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র সাহা, কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য মামুনুর রশিদ মামুন, সাবেক পৌর মেয়র জামিলুর রহমান মিরন, কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার প্রমুখ।

অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি জোয়াহেরুল ইসলামের (ভিপি জোয়াহের) নেতৃত্বাধীন গ্রুপ টাঙ্গাইল পৌর শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের)। সমাবেশের উদ্বোধন করেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছানোয়ার হোসেন এমপি। প্রধান বক্তা ছিলেন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা।

পৌর শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীরের সভাপতিত্বে এ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মির্জা মঈনুল হোসেন লিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুজ্জামান খান সোহেল, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক বদিউজ্জামান ফারুক, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ওয়াজির হাসান খান শরীফ হাজারী, পৌর শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উদয় লাল গৌড় প্রমুখ।

পৃথক উভয় সমাবেশে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ব্যানার নিয়ে নেতাকর্মীরা অংশ নিলেও শ্রমিক সমাবেশে শ্রমিকদের কোনো প্রাধান্য ছিলনা। মূলত দলীয় নেতাকর্মীরা শক্তি প্রদর্শনের লক্ষে সমাবেশে উপস্থিতি বাড়ায়।

ইএইচ