উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান ও তার তিন সহযোগীকে গুলি করে এবং কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শুক্রবার দুপুরে জেলার গৌরনদী উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারিছুর রহমান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন আহত ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলুর স্ত্রী বিপাশা গুহ।
তবে এ ঘটনায় হারিছুর রহমানের এক সমর্থক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আহতদের মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু, তার সমর্থক পলাশ হাওলাদার ও প্রতিপক্ষের দেলোয়ার হোসেন দিলুকে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।
আহত ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈকত গুহ পিকলুর স্ত্রী বিপাশা গুহ অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামীকে আগে থেকেই টার্গেট করেছে হারিছুর রহমান। তিনি মেয়র পদ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। আমার স্বামী (পিকলু) তিন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী, মনির হোসেন মিয়া ও মো. হাবিবুর রহমানকে একত্র করে নির্বাচনে নামেন। বিষয়টি হারিছ মেনে না নিয়ে সৈকত গুহ পিকলুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর বাটাজোর এলাকায় বসে পিকলু ও তার সাথে থাকা ব্যক্তিদের কুপিয়ে ও গুলি করে জখম করা হয়। হারিছুর রহমান নিজে পিকলুর বুকের ওপর পা দিয়ে জিজ্ঞেস করেছে, তোর বাপ কে? তোর বাপ হারিছ!
বিপাশা গুহ অভিযোগ করে আরও বলেন, আমার স্বামীর ওপর তিন দফায় হামলা হয়েছে। হারিছ আসার আগে একবার, হারিছ ঘটনাস্থলে এসে নিজে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে আর হাসপাতালে নেওয়ার পথে। খবর পেয়ে পিকলু গুহর ভাই যুবলীগ নেতা সলিল গুহ পিন্টু ও মা তাপসী রানী গুহ এবং আমি উপজেলার হাসপাতালে ছুটে গেলে পিন্টুকে বেধমভাবে মারধর করে মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়েছে হারিছের সহযোগীরা। একইসময় তার মা তাপসী রানী গুহর ওপর হামলা করে মোবাইল ও টাকা-পয়সা লুট করে নেয়া হয়।
গৌরনদী উপজেলার সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ও প্রার্থী সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী বলেন, হারিছ নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু ও তার তিনজন সহযোগীকে গুলি করে এবং কুপিয়ে জখম করেছে। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে বাধা দিয়েছে। সেখানে পিকলুর স্ত্রী, ভাই ও মা গেলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে থানা পুলিশের সহায়তায় আহত ইউপি চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য আহতদের উদ্ধার করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে আসি।
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মনিরুন নাহার মেরী আরও বলেন, হারিছ বাহিনী গৌরনদীতে একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। হারিছের টর্চার সেলে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে মারধর করা হয়েছে। মূলত ত্রাসের মাধ্যমে সে উপজেলা নির্বাচনের বৈতরণি পার হতে চায়।
অভিযুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হারিছুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়া তার (হারিছ) আপন ভাই মো. হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, ইউপি চেয়ারম্যান পিকলুর ওপর হারিছ তার বাহিনীর ক্যাডারদের নিয়ে হামলা করেছে। পিকলুকে খুন করতে তাকে কুপিয়ে গুলি করা হয়েছে। গৌরনদী হাসপাতালে নেওয়ার পর হারিছ বাহিনী হাসপাতালে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। আহতদের বরিশালে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে তোলার পর বের হতে পারেনি। পুলিশ এসে অ্যাম্বুলেন্স বের হতে সহায়তা করে।
অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, হারিছের ভয়ে আমরা ভাইরাই পৈত্রিক বাড়িতে উঠতে পারি না। সে বাড়িতে টর্চার সেল চালু করেছে। তার টর্চার সেলে অনেক নেতাকর্মীকে নিয়ে অত্যাচার করা হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে গৌরনদীতে কোন ক্রমেই সুষ্ঠু নির্বাচন হবেনা বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মনির হোসেন মিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলুকে নিয়ে বাটাজোর এলাকায় গণসংযোগে যান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে গণসংযোগে বাঁধা দেন হারিছুর রহমানের সমর্থক দেলোয়ার হোসেন দিলু, ফেরদাউস, রেমন তালুকদার ওরফে হাত কাটা কালু, রাসেল রাঢ়ীসহ ২০/২৫ জনের একটি সশস্ত্র দল। তারা পিকলু ও তার সাথে থাকা সহযোগীদের কুপিয়ে এবং গুলি করে গুরুতর জখম করে।
তবে হামলার সূত্রপাতকারী দেলোয়ার হোসেন দিলু পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, আমি ও আমার চার বন্ধু চায়ের দোকানে বসেছিলাম। পিকলু ও তার সমর্থকরা আমাদের দেখে গুলি করে। এতে আমি আহত হয়েছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. হারিছুর রহমানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তা বন্ধ থাকায় কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
গৌরনদী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে উভয়পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর বাটাজোর ও মাহিলাড়া এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ইএইচ