মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ১ম ধাপে অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৮ই মে। সকাল থেকে উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নে ৫৭ টি কেন্দ্রে ৩০৬ টি ভোট কক্ষে পুরুষ ৭৩৭৯৪ জন এবং মহিলা ৭৩৭২৬ জন মোট ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫২০ জন ভোটার প্রয়োগ করবেন তাদের ভোটাধিকার।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচন ভীষণ ভাবে জমে উঠলেও এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এবারের নির্বাচনে দলীয় কোনো প্রতীক ও বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় ফাঁকা মাঠে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ প্রার্থী এখন আওয়ামী লীগ। ফলে উপজেলায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে পাল্টাপাল্টি দ্বন্দ্ব- বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। যা কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটিকেও স্পর্শ করেছে।
অবশ্য স্থানীয় নেতারা বলছেন দলে কোন বিরোধ নেই, কর্মীরা যে যার মত করে পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিয়েছে। অপর দিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।
শ্রীপুর উপজেলায় দু’বার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন মিয়া মাহমুদুল গনি শাহীন। এবার তিনি দোয়াত কলম প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাকালীন শ্রীপুর বাহিনীর অধিনায়ক আকবর হোসেন মিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র শরিয়তউল্লাহ হোসেন মিয়া রাজন মোটরসাইকেল, শ্রীপুর বাহিনীর সহ-অধিনায়ক মোল্লা নবুয়ত আলীর পুত্র ও শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শ্রীকোল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এম এম মোতাসিম বিল্লাহ সংগ্রাম ঘোড়া এবং খোন্দকার আসরার এলাহী আনারস প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এই নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা সবাই-ই আওয়ামী লীগ সমর্থিত।
উপজেলায় আনারস প্রতীকের প্রার্থী বাদে অপর তিন প্রার্থীর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতীকর্মীরা তিন প্রার্থীর জন্য তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন।
দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী মিয়া মাহমুদুল গনি শাহীনের পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক হুমায়উনুর রশিদ মুহিত, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নেকবার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সেবানন্দ বিশ্বাসসহ ছাত্রলীগের একাংশ রয়েছে। মোটরসাইকেল প্রতীকের শরিয়তউল্লাহ হোসেন মিয়া রাজনের পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইসমত আরা হ্যাপী, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসেন, উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আফসার উদ্দিন মোল্যা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট হারুন-অর-রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন কানন, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আনিচুর রহমান কনক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খোন্দকার শফিকুল ইসলাম রবি, সহ-দপ্তর সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম টোকনসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মৎস্যজীবী লীগ ও ছাত্রলীগের একাংশ রয়েছে।
অপর দিকে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী এম এম মোতাসিম বিল্লাহ সংগ্রামের পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও নাকোল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া, শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি,শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মসিয়ার রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গয়েশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম মোল্যা, উপজেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিক্তযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক খবির হোসেন খানসহ আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে রয়েছেন।
নেতাদের পাল্টা-পাল্টি সমর্থনে সাধারণ কর্মী যারা রয়েছেন তারা পড়েছেন বিপাকে। সমর্থন দেওয়া নেওয়া নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসন যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে রেখেছে।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৯ সালে শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে আনারস প্রতীকে ৩৯ হাজার ১০৮ ভোট পেয়ে জয়ী হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মিয়া মাহমুদুল গনি শাহীন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পঙ্কজ কুমার সাহা ২৪ হাজার ৭৭৪ ভোট পেয়ে পরাজিত হন। এর আগে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বদরুল আলম হিরো ৩৭ হাজার ৩৭৩ ভোট পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হুমাউন উর রশীদ মুহিত ৩৩ হাজার ১১ ভোট পেয়ে পরাজিত হন। সেসময় আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপের কৌশলগত বিরোধীতার কারণে মুহিত
অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে পরাজিত হন।
এদিকে ২০০৯ সালে মিয়া মাহমুদুল গনি শাহীন প্রথমবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়ে হেভিওয়েট প্রার্থী গোলাম মোক্তাদের রহমানকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
বিআরইউ