জ্যৈষ্ঠের শুরুতে কিশোরগঞ্জে আগাম জাতের লিচু বিক্রি শুরু হয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই রসালো এ ফল ক্রয় করতে আগ্রহের কমতি নেই ক্রেতাদের। তবে অন্যান্যবারের চেয়ে এবার দাম দ্বিগুণ হওয়ায় লিচু এখন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নাগালের বাইরে।
লিচু ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে চলমান তাপপ্রবাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে এবার লিচুর ফলন কমের পাশাপাশি আকারেও অপেক্ষাকৃত ছোট হয়েছে। এছাড়া ফেটে যাওয়াসহ পোড়া ক্ষত দেখা যাচ্ছে লিচুর গায়ে। এতে বড় প্রভাব পড়েছে বাজারে।
একসপ্তাহ আগে থেকে বাজারে লিচু আসতে শুরু করেছে। গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে আসা এসব লিচু অপরিপক্ব ও আকারে ছোট। রাজশাহী বা দিনাজপুরের পরিপুষ্ট লিচু এখনও বাজারে পুরোপুরি আসেনি। এ দুই জেলার লিচুর জন্য ক্রেতাদের আরও এক দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।
সাধারণত দিনাজপুরের লিচু স্বাদ ও মান আলাদা। আর বাজারে আসার আগে বৃষ্টি পেলে এসব লিচু আকারে বড় এবং রঙ ও সুন্দর হবে। পাশাপাশি রসে ভরা থাকবে। সারা দেশেই এ লিচুর চাহিদা বেশি। বিভিন্ন জাতের লিচুর মধ্যে আছে বেদানা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-থ্রি ইত্যাদি।
সোমবার কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পুরানথানা, কাচারিবাজার, বড়বাজারসহ শহরের কয়েকটি বাজার ঘুরে লিচু ক্রয়-বিক্রয়ের এমন তথ্য জানা যায়।
বিক্রেতারা বলছেন, প্রথমদিক হওয়ায় বাজারে লিচুর দাম তুলনামূলক বেশি। এছাড়াও ফলন কম হওয়ায় গতবারের তুলনায় লিচুর দাম এবার দ্বিগুণ। গত জ্যৈষ্ঠের শুরুতে কিশোরগঞ্জে প্রতি একশ লিচু ২০০ থেকে আড়াইশো টাকায় বিক্রি হয়েছে। এবার সেই লিচু কিনতে হচ্ছে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়।
পুরানথানার লিচু বিক্রেতা আজিজুল বলেন, গতবারের চেয়ে এবারে লিচুর দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজারে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। প্রতি একশ লিচু ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দামে কেনা পড়ছে। যা ৩০ থেকে ৪০ টাকা লাভ রেখে আমরা বিক্রয় করছি।
লিচু কিনতে আসা মুবিনুর রহমান বলেন, বছর ঘুরলেই লিচুর দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। এখানেও একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজি আছে। এরপরও একে তো মধু মাস তারমধ্যে লিচুর তুলনা তো অন্য কোনো ফল দিয়ে হয় না। তাই দাম দ্বিগুণ দিয়েই পরিবারের জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে লিচু ক্রেতারা অভিযোগ করেছে ১ শ লিচুতে সঠিক ১শ লিচুই থাকে না। অনেক সময় ২০-৩০ টা লিচু কম থাকে। প্রশাসনের উচিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
শহরের কাচারিবাজারে লিচু কিনতে আসা জামাল বলেন, গ্রামে যাচ্ছিলাম। এজন্য ভেবেছিলাম একশ লিচু নেবো। বিক্রেতা দাম চেয়েছেন সাড়ে তিনশ টাকা। একশ লিচুর জন্য এত টাকা খরচ করা সম্ভব নয়। তাই লিচু ছাড়াই যাচ্ছি।
ফলপট্টির সাগর ফল ভান্ডারের সাগর বলেন, জ্যৈষ্ঠর শুরুতে বাজারের সিংহভাগ যে লিচু এসেছে তা মোজাফফর জাতের। প্রতিদিন ভোরে বাগান মালিক ও চাষিরা পট্টিতে এসে নিলামে লিচু বিক্রি করেন। পাইকারি ব্যবসায়ীদের প্রতি হাজার লিচু আড়াই থেকে তিন হাজারে কিনতে হচ্ছে। এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রাজশাহী ও দিনাজপুরের পরিপুষ্ট রসালো লিচু পাওয়া যাবে।
কিশোরগঞ্জ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হৃদয় রঞ্জন বণিক বলেন, এটা কৃষি পণ্য। তাই কৃষি বিপণন অধিদপ্তর দাম বেশির বিষয়টি দেখবে। আর পরিমাণে কম দেয়ার বিষয়টি আমরা তদারকি করবো। যদি পরিমাণে কম দেয়া হয় আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো।
ইএইচ