অনলাইনে সেবার মান বৃদ্ধি: ভোগান্তি কমেছে গাইবান্ধা বিআরটিএ সার্কেলের গ্রাহকদের

গাইবান্ধা প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ২০, ২০২৪, ০৪:৩৬ পিএম

সড়কজুড়ে চলাচল করা মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে, সিএনজি, বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক গাড়ির বৈধ কাগজপত্র সংরক্ষণ ও বিতরণের দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি যা সংক্ষেপে বিআরটিএ নামে পরিচিত। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে মোটর চালিত যানবাহনের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সংস্থাটির কাজের পরিসর বেড়েছে কয়েক গুণ। 

দেশের অন্য সব জেলার মতো প্রতিদিন বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে শত শত মানুষ সেবা নিতে আসেন গাইবান্ধা জেলা বিআরটিএ সার্কেল অফিসে। একটা সময় গ্রাহকরা এই অফিসে সেবা নিতে গিয়ে নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হলেও আধুনিকায়নের ফলে পাল্টে গেছে গাইবান্ধা বিআরটিএ অফিসের দৃশ্যপট। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সেখানে লাইসেন্স কিংবা যানবাহনের নতুন রেজিস্ট্রেশন, মালিকানা বদলি, নবায়ন এবং ফিটনেস করতে আসা মানুষের ভিড় লেগেই আছে।

গাইবান্ধা বিআরটিএ সার্কেল সূত্রে জানা যায়, ডিজিটালাইজেশনের ফলে BSP অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ঘরে বসেই লার্নার, ড্রাইভিং পরীক্ষার দিন বায়োমেট্রিক গ্রহণ, ড্রাইভিং পাশের পরবর্তী আবেদন অনলাইনে প্রেরণ, আবেদনের ১ দিনের মধ্যে বিএসপি অ্যাকাউন্টে ইপেপার লাইসেন্স প্রাপ্তি এবং ৩০ দিনের মধ্যে ঘরে বসে ডাকযোগে লাইসেন্স প্রাপ্তিসহ নির্বিঘ্নে বহুমুখী সেবা পাচ্ছেন গ্রাহকরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতবছর সারাদেশে বিআরটিএসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে দালাল ও তদবিরবাজদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চালায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব। এই অভিযানের পর বিআরটিএসহ বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়গুলোতে দালালদের দৌরাত্ম্য অনেকাংশে কমেছে। এ সুযোগে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি রাজনৈতিক সুবিধাভোগীদের এই নিয়মের আওতায় আসতে হয়েছে।

আগে যেখানে সাধারণ মানুষের অভিযোগ ছিল গাইবান্ধা বিআরটিএ অফিস দালালদের দৌরাত্ম্য ও তদবীরবাজি ছাড়াও অফিসের কর্মচারী ও কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আনফিট গাড়িগুলোকে ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদান করা হতো। অজুহাত দেখিয়ে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসা সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হতো প্রতিদিন। এখন সে চিত্রটাই ভিন্ন।

সরেজমিনে গাইবান্ধা বিআরটিএ কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের কেউ নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করছেন, কেউ করছেন লাইসেন্স নবায়নের আবেদন। আবার কেউ লাইসেন্স হারিয়ে এখন ডুপ্লিকেট লাইসেন্সের জন্য আবেদন করছেন। কেউ কেউ এসেছেন লাইসেন্স এর স্লিপের মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়ে যেতে।

মোটরযানের ফিটনেস পরীক্ষা করা, মালিকানা পরিবর্তন করা এবং ডিজিটাল নম্বরপ্লেট পাওয়াসহ বিভিন্ন কাজে আসা লোকজনকে শৃঙ্খলার সঙ্গে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে সরকারি এই সংস্থাটির অফিসে, যা বছর খানেক আগেও ছিল কল্পনাতীত। সেবা নিতে আসা লোকজন এখন নিজের কাজ নিজে করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

বিআরটিএ অফিস কম্পাউন্ডে বরাবরই ‘দালাল দৌরাত্ম্য’ ওপেন সিক্রেট হলেও গত বছর থেকে সে চিত্রও বদলে গেছে। তাতে ভূমিকা রয়েছে গাইবান্ধা বিআরটিএ’র সার্কেলের বর্তমান সহকারী পরিচালক রবিউল ইসলামের। 

মোটরযান চালকদের পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত বিশেষ প্রশিক্ষণ ও ওরিয়েন্টেশন চলছে এ অফিসে।

গাইবান্ধা বিআরটিএ অফিস কার্যালয়ের ফিটনেস সার্টিফিকেটের জন্য যানবাহনের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। বেশিরভাগই প্রাইভেটকার। এ ছাড়া ট্রাক, কাভার্ডভ্যান। কিন্তু আগের মতো বিশৃঙ্খলা দেখা যায় না। BSP অ্যাকাউন্টে এপারমেন্ট দিয়ে প্রতিটি যানবাহন ফিটনেস পরীক্ষা করছে। নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আসা লোকজন লাইনে দাঁড়িয়ে সেবা গ্রহণ ও অন্যান্য কার্যক্রম সেরে নিচ্ছেন৷ 

গাইবান্ধা বিআরটিএর সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার রবিউল ইসলাম বলেন, এ অফিসে জয়েন করার পর থেকে আমার লক্ষ্য ছিল অফিসটি দুর্নীতি ও দালাল মুক্ত করা। এ অভিযান আমাদের এখনও চলমান রয়েছে। কয়েকদিন পরপরই ঘোষণা করা হচ্ছে, যেন দালালদের খপ্পরে কেউ না পড়েন। এছাড়াও সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষদের লাইসেন্স কিংবা অন্য কোনো ব্যাপারে সেবা নিতে সেবাগ্রহীতাকে নিজে সশরীরে এসে সেবা নেওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন৷

ইএইচ