মাটিদস্যুদের তাণ্ডব: বিলীনের পথে সরকারি সোলার সেচ স্কিম

ফেনী প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ২১, ২০২৪, ০৩:৩৮ পিএম

মাটিদস্যুদের তাণ্ডবে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে সরকারি ১ কিউসেক সৌরশক্তি চালিত এলএলপি সোলার সেচ স্কীম।

গত কয়েক মাস ধরে রাতের আঁধারে এ স্কিমের তিন পাশের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে মাটি দস্যুরা। ফলে পার্শ্ববর্তী জেলা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের পাশ ঘেঁষে বয়ে যাওয়া এ নদীতে বিলীন হওয়ার পথে এই এলএলপি সোলার সেচ স্কীমটি।

ফেনী ও নোয়াখালীর দুই উপজেলার মানুষের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় এ স্কিমটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

মঙ্গলবার সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের দক্ষিণ-পশ্চিম চরদরবেশ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ছোটধলি গ্রামের শেষ সীমান্তে ছোট ফেনী নদীর পাশেই এলএলপি সোলার সেচ স্কিমটি অবস্থিত।

স্থানীয়দের দাবি পার্শ্ববর্তী ওই দুই উপজেলার মানুষ এ স্কিম থেকে সেচ সুবিধা পেয়ে থাকেন। অথচ সেখানকার স্থানীয় একটি মাটি কারবারি চক্র স্কিমটির তিন পাশের মাটি কেটে লুট করে নিয়ে যাওয়ার কারণে বাড়ছে নদীর ভাঙন, এতে হুমকির মুখে পড়েছে সোলার সেচ স্কিমটি। যেকোনো মুহূর্তে দেবে গিয়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে স্কিমটি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মুছাপুর ইউনিয়নের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, গত দুই মাস ধরে প্রতিদিন রাতের আঁধারে বড় বড় খননযন্ত্র (বেকু মেশিন) দিয়ে সরকারি ওই সোলার সেচ স্কিমের চারপাশের মাটি কেটে ট্রাক্টরে করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

তাদের দাবি, এসব মাটিদস্যুরা মুছাপুর ও সোনাগাজীর বাসিন্দা। তবে ভয়ে তারা এসব মাটিদস্যুদের নাম-পরিচয় জানেন না বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন।

তবে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপ না থাকায় মাটিদস্যুরা দিনদিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে মন্তব্য করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কৃষকদের কাজের সুবিধার্থে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মুছাপুর আবু তাহের মাস্টার এলএলপি সোলার সেচ স্কিমটি নির্মাণ করা হয়।

ওই বছরই চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে নোয়াখালী বিএডিসি সেচ বিভাগ। তখন সোহেল ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পটির কাজ করেছিল।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মো. বেলাল হোসেন বলেন, গত একমাস আগে ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়ার অভিযোগ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাননি। তবে মাটিবোঝাই কয়েকটি গাড়ি আটক করেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, এ সোলার সেচ স্কিমের সাহায্যে বর্তমানে কৃষিকাজে ভালো সুফল পাচ্ছেন। তবে মাটি কেটে নেয়ার ফলে সেচ পাম্পটি হুমকির মুখে পড়বে। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

এদিকে সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোতাহের হোসেন জানান, ছোট ফেনী নদীর পাশে হওয়ায় সোলার সেচ স্কিম থেকে স্থানীয় কৃষকরাও কৃষি কাজে বেশ সুফল পাচ্ছেন। স্কিমটি বর্তমানে ছোট ফেনী নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে রয়েছে, এমনটা মনে করছেন তিনি নিজেও।

এসব বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীকে কল করা হলে তিনি মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোন দিলে তিনি ফোনই রিসিভ করেননি।

বিষয়টি নিয়ে নোয়াখালী বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী তানজিনা আক্তার বলেন, আমরা কৃষকদের কাজের সুবিধার্থে এ স্কিমগুলো বসাই কিন্তু এখন তিন পাশে যেভাবে দস্যুরা মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদনে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হতে পারে।

এছাড়া তিনি আরও বলেন, এতে স্কিমটি বসে যেতে পারে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হবে।

ইএইচ