বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ১৬ ঘণ্টা

ঘূর্ণিঝড় রেমাল‍‍`র তাণ্ডবে মির্জাগঞ্জে জনজীবন বিপর্যস্ত

মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২৪, ০৬:২১ পিএম

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে তাণ্ডব চালাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। গতকাল রবিবার সকাল থেকে বৃষ্টিসহ দমকা বাতাস শুরু হয়ে আজ সোমবার (২৭ মে) বিকাল পর্যন্ত চলছে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব। ঝড়ো হাওয়া,বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পায়রা ও শ্রীমন্ত নদের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩/৪ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার অধিকাংশ হাট-বাজার সহ নিম্নাঞ্চল পানিতে প্লাবিত হয়েছে, টানা বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে ভেঙে পড়েছে কয়েক হাজার গাছপালা। 

টানা বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে বিভিন্ন এলাকায় গাছ উপড়ে বসত বাড়িতে পড়ে বসত বাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বরিশাল-বরগুনা মহাসড়ক মির্জাগঞ্জের আঞ্চলিক মহাসড়কের অধিকাংশ স্থানে সড়কের উপর দিয়ে পানি উপচে পড়তে দেখা গেছে। টানা ১৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছে উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। উপজেলার ৫৮ টি আশ্রয় কেন্দ্রে গবাদি পশু নিয়ে ২ সহস্রাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বলে মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন।

টানা বৃষ্টি ও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জলোচ্ছ্বাসের পানিতে ভাসছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। পায়রা ও শ্রীমন্ত নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে মাছ ঘের ও কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে কাঁচাঘর-বাড়ি, মসজিদ এবং উপজেলায় পায়রা নদীর তীরবর্তী পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন পয়েন্টের বেড়িবাঁধ। গত রবিবার সন্ধ্যা রাত থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।

মির্জাগঞ্জ সাব স্টেশন পল্লী বিদ্যুৎ এর এজিএম মো. মেহেদী হাসান জানান, মির্জাগঞ্জ নয় পটুয়াখালী জেলা থেকে পল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। ঝড় কমলে লাইন চেক করে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু করা হবে।

এদিকে রেমালের তাণ্ডব লীলা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। রবিবার রাতে কয়েক ফুট পানির নিচে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে শ্রীমন্ত নদের পানি ৩/৪ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় রবিবার রাত ১২টার দিকে উপজেলা ভূমি অফিসে সামনের সড়ক,সুবিদখালী বাজার,পশু হাসপাতাল সড়ক হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে গিয়ে পূর্ব সুবিদখালী,পশ্চিম সুবিদখালী, সুবিদখালী বাজার ও ছৈলাবুনিয়া এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

পূর্ব সুবিদখালী গ্রামের নুরজামাল বলেন,বাহিরে শুধু থই থই করছে পানি। সিডরকেও হার মানিয়েছেন এ ঘূর্ণিঝড় রেমাল। আমার মাছের ট্রলার সিডরেও ডুবে নায়,এই ঘূর্ণিঝড় রেমানে ডুবে গেছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে জলোচ্ছ্বাসে রূপ নেয়ায় আমার মাছের ঘের আর কৃষি তো প্রায় শেষ। ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলা দেখেছি কিন্তু জলোচ্ছ্বাস এতো দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল‍‍`র প্রভাবে উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে দুই সহস্রাধিক নারী,পুরুষ ও শিশু গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। রবিবার রাতে আশ্রয় নেয়া লোকজনকে শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। দুর্যোগ কালীন ও পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ৪টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে । খোলা হয়েছে ১টি কন্ট্রোল রুম। তবে পানি না কমলে দুর্ভোগ আরো বাড়তে পারে।

আরএস