রাঙ্গুনিয়ায় জলধারা প্রতিবন্ধকতায় পানিবন্দি শিক্ষক পরিবার

রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২৪, ০৯:১৯ পিএম

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় পানি নিষ্কাশনের পথে পাকা দেওয়াল নির্মাণ করে শিক্ষক পরিবারকে পানি বন্দি করে রাখার অভিযোগ, উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়ন ৬নং ওয়ার্ড সিপাহি পাড়ার মৃত শামশুল আলমের পুত্র মোহাম্মদ আলমগীরের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, একই এলাকায় অভিযুক্তের পার্শ্ববর্তী বাড়িটি সরফভাটা ইউনিয়ন আ: লীগের সভাপতি আব্দুর রউফ মাস্টারের বসতবাড়ি। মঙ্গলবার (২৮মে) সরেজমিনে পরিদর্শনে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়, রেমাল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারি বর্ষণ হলে উঠান প্লাবিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। গত কিছু দিন আগে এক সপ্তাহে ভারি বর্ষণে জলাবদ্ধতার কারণে পানি বন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে মানবেতর জীবন যাপন করেছিল পরিবারটি।

ভুক্তভোগী আব্দুর রউফ মাস্টার জানান, "মোহাম্মদ আলমগীরের পৈত্রিক সূত্র পাওয়া বসতভিটাটি দিয়ে বৃষ্টি বাদলের দিনে পানি নিষ্কাশন হয়ে পার্শ্ববর্তী বিলে চলে যেতো। বহু বছর ধরে এভাবে পানি নিষ্কাশন হয়ে আসছে। গত ২০২৪ জাতীয় নির্বাচন সময় তার বসতভিটায় সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়াল নির্মাণ করে, সেসময় আমরা আলমগীরকে পানি নিষ্কাশনের জন্য ছোট একটি ড্রেনেজ ব্যবস্থা রাখার অনুরোধ করলেও তিনি কর্ণপাত করেনি। ফলে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দেয়ায় কয়েকদিন ভারী বর্ষণে বসতভিটায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে আমরা পানি বন্দি হয়ে পড়ি। উঠানে হাঁটু সমান পানি, কর্মজীবনে কাজের তাগিদে আমিসহ বাড়ির সদস্যরা আসা-যাওয়া করতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। এছাড়াও উল্লেখ্য যে, আমাদের বাড়িটি মাটির ঘর হওয়ায়, বাড়ির দক্ষিণ পাশে আলমগীরের বাড়ি সম্প্রসারণ করতে গিয়ে টিনের চাল দিয়ে বৃষ্টির পানি আমার মাটির ঘরের দেওয়ালে সরাসরি এসে পড়ে। এতে যেকোনো সময় দেওয়াল ভেঙে বড় কোন দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে পারে।"

তিনি আরো জানান, "এই বিষয়ে দুই সপ্তাহ আগে সরফভাটার ইউপি চেয়ারম্যানকে অবগত করলে তিনি একজন চৌকিদার সহ ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলামকে পাঠায়, সে সময় পানি নিষ্কাশনের ছোট একটি রাস্তা করে দেওয়া হয়। এতে কিছুটা পানি নিষ্কাশন হলেও এর পরের দিন পুনরায় রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়। এতে গত এক মাস ধরে পানি বন্দি হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছি। আমি একজন দায়িত্বশীল ও সচেতন শিক্ষক, সব সময় আইনকে শ্রদ্ধা করে চলি, এমতাবস্থায় আমি আশা করি রাঙ্গুনিয়া প্রশাসন আমার পরিবারের দুর্ভোগ নিরাসনে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।"

এদিকে, প্রতিবেদক অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলমগীরের বাড়িতে ঘটনার সম্পর্কে জানতে গেলে বাড়ির ভিতর থেকে একজন মহিলা বলেন, "আলমগীর বিদেশে থাকেন এবং তারা এ বিষয়ে কোনো কিছু বলতে পারবেন না।"

এ বিষয়ে সরফভাটা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী সাথে কথা বললে তিনি জানান, "আব্দুর রউফ মাস্টারের দেয়া মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে একই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও চৌকিদারকে পাঠায় এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থার করে দেয়া হয় কিন্তু পরের দিন কে বা কাহারা পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থারটি বন্ধ করে দেওয়াতে মাস্টারের পরিবার জলাবদ্ধতার কারণে চলাচলের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।"

সরফভাটা ইউনিয়ন ৬নং ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, "আব্দুর রউফ মাস্টারের ফোন পেয়ে আমি বেশ কয়েকবার গিয়ে মোহাম্মদ আলমগীর দেশে না থাকায় তার মাকে নিষেধ করার সত্ত্বেও তারা ড্রেনেজ ব্যবস্থা করেনি পরে চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে এবং সাথে একজন চৌকিদারকে দিয়ে পাঠালে আমরা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিই। পরবর্তী শুনলাম ওই রাস্তা দিয়ে নাকি মাটি দিয়ে ভরাট করে দিয়েছে।"

একই বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সহকারী ভূমি ম্যাজিস্ট্রেট মারজান হোসাইন সাথে কথা বললে তিনি জানান, "বস্তুত আইন মেনে সীমানা নির্ধারণ করে প্রাচীর বা দেওয়াল নির্মাণ করলে তাতে আইনি কোন সমস্যা নেই। তবে কোন অবস্থাতে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। পানির প্রবাহ বাধা দেয়া দণ্ডনীয় অপরাধ।"

আরএস