মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ডোপ টেস্টের টাকা আত্মসাৎ!

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৪, ০৪:৪৫ পিএম

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে ডোপ টেস্টের টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে টেকনোলজিস্ট ইউনুসের বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, গত বছর ১২ অক্টোবর হতে মান্নানকে দিয়ে এই হাসপাতালে ডোপ টেস্টের অগ্রযাত্রা শুরু করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এরপর থেকেই টেকনোলজিস্ট ইউনুস তার অভিনব কায়দায় শুরু করে অর্থ আত্মসাৎ এর পদযাত্রা। প্রতিদিন ডোপ টেস্টের যত লোক আসে তাদের প্রত্যেকের নিকট হতে ১২ শত টাকা নিয়ে একটি চিরকুটের মাঝে নাম লিখে রাখেন তিনি। ডোপ টেস্টের গ্রাহকরা রিসিভ চাইলে সে পরে দিবে বলে তাদের জানিয়ে দেয়।

এভাবে তিনি গত বছর ১২ অক্টোবর হতে চলিত অর্থ বছরে ১২ মে পর্যন্ত সরকারি রিসিভ বইয়ে মাত্র ১৪ টি ডোপ টেস্টের ৯ শত হিসেবে রিসিভ দেন ডোপ টেস্ট গ্রাহকদের। প্রতি গ্রাহকের নিকট হতে ৩ শত টাকা বেশী নেওয়ার পরও আবার গ্রাহকদের ডোপ টেস্টের রিপোর্ট তাড়াতাড়ি পাওয়াইয়া দেওয়ার শর্তেও হাতিয়ে নেয় হাজার হাজার টাকা।

গত ১২ মে টেকনোলজিস্ট ইউনুস সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী টের পেয়ে ওই দিনই ১১ জন ডোপ টেস্ট গ্রাহকের টাকা জমা করেন রিসিভ বইয়ে। সরকারি-বেসরকারি চাকুরি, ড্রাইভিং লাইসেন্স, অস্ত্রের লাইসেন্স ইত্যাদি বিষয়ের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট আবশ্যক।

তারই ধারাবাহিকতার অনুসন্ধানে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য মানিকগঞ্জ বিআর টিএ অফিসে গত ৭ মাসে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের ডোপ টেস্টের রিপোর্ট পাওয়া যায় মোট ২৯৬ টি।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ডোপ টেস্টের জন্য প্রতি গ্রাহকের নিকট হতে ৯ শত টাকা হিসেবে বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী ২৯৬ জনের নিকট হতে ২ লক্ষ ৬৬ হাজার ৪ শত টাকা আত্মসাৎ করে এবং রিপোর্ট তাড়াতাড়ি পাওয়ায় দেওয়ার শর্তেও হাজার হাজার টাকা উৎকচ আদায় করে টেকনোলজিস্ট ইউনুস। অথচ
মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের রিসিভ বই ও রেজিস্ট্রার বইতে গত বছরের ১২ অক্টোবর হতে চলিত বছরের ১২ মে পর্যন্ত মাত্র ১৪ টি ডোপ টেস্ট দেখানো হয়।

বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) এর প্রণীত খসড়া অনুযায়ী ডোপ টেস্টে নির্দিষ্ট কিছু মাদক পরীক্ষা করা হয়। যেমন-
ডায়াজেপাম, লোরাজেপাম, অক্সাজেপাম, টেমাজেপাম, কোডিন, মরফিন, হেরোইন, কোকেন, গাজা, ভাং, চরস, অ্যালকহোল বা মদ, ফেনিসিডিল, ইয়াবা ও এলএসডি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক এ সমস্ত মাদকের ডোপ টেস্ট পরীক্ষার জন্য দেশের সব সরকারি হাসপাতালে সর্বোচ্চ ৯ শত টাকা ফি নির্ধারণ করেন।

নন-স্পেসিফিক পরীক্ষা যেমন- বেঞ্জোডায়াজেপিন, এমফেটামাইনস, অপিয়েটস ও কেননাবিনেয়েডস- এই চারটির প্রতিটির জন্য ফি ১ শত ৫০ টাকা হিসেবে ৬ শত টাকা এবং অ্যালকোহল পরীক্ষার ফি ৩ শত টাকা হিসেবে মোট ৯ শত টাকা নিয়ম করে দিলেও তা মানছে না মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল।

শিবালয় উপজেলার তেওতা গ্রাম হতে ডোপ টেস্ট করতে আসা শহিদুল ইসলামসহ একাধিক গ্রাহক বলেন, আমাদের নিকট হতে ১২ শত টাকা করে নিয়েছে রিসিভ দেয় নাই।

টেকনোলজিস্ট ইউনুসের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এই রিসিভ বইয়ে যে কয়টা রিসিভ কাটা হয়েছে সে কয়টায় ডোপ টেস্ট করা হয়েছে। অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি অস্বীকার করে বলেন, আমরা ডোপ টেস্টে ৯ শত টাকাই নেই তবে কোন কোন টেস্টে ১২ শত টাকা লাগে।

মানিকগঞ্জ বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মাহাবুব কামাল বলেন, আমাদের অফিসে গত বছর ৩০ অক্টোবর হতে চলিত বছর ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ১৪০৮ টি ডোপ টেস্টের রিপোর্ট জমা পড়েছে। এর মধ্যে ২৯৬ টি মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের।

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: মোহাম্মদ বাহাউদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ডোপ টেস্টেরজন্য আমাদের হাসপাতালে ২০০ টি কীট এনেছি, ২৯৬ টি ডোপ টেস্ট কীভাবে সম্ভব। বিআরটিএ অফিস আপনাদের ভুল তথ্য দিয়েছে।

বিআরইউ