কক্সবাজারে বেড়েছে চোরাকারবার

রাশেদুল ইসলাম, কক্সবাজার প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২৪, ০৭:৩৯ পিএম

কক্সবাজারের রামু ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এই দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে বেড়েছে চোরাকারবার। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অপরাধ কর্ম দেদারসে চালাচ্ছে চিহ্নিত চক্র।

অভিযোগ উঠেছে, মো. এরশাদ উল্লাহ, আনোয়ার হোসেন রাসেল নামের দুই ব্যক্তি কাছেই সীমান্তের নয় গ্রামের নিয়ন্ত্রণ করে।

পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা চোরাচালানে জড়িত থাকলেও অদৃশ্য কারণে কোনো মামলায় তাদের নাম যুক্ত করা হয়নি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন রাসেল বলেন, আমি একজন কাঠ ব্যবসায়ী। কচ্ছপিয়া বাজার ইজারার সঙ্গে যুক্ত আছি। চোরাচালানের সঙ্গে আমি কোনোভাবেই জড়িত নই। অভিযোগের বিষয়টি ষড়যন্ত্র।

তবে স্থানীয়রা জানান, প্রভাবশালী এই দুই যুবক চোরাচালান সিন্ডিকেট পরিচালনা করে থাকে। প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগে বেপরোয়া হয়ে গেছে তারা। ওই এলাকা দিয়ে সিগারেট, অস্ত্র, বিস্ফোরক ও গরু পাচার হয়ে আসছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি এই দুই উপজেলার অন্তত ৯টি গ্রাম একেবারেই সীমান্ত ঘেঁষা।

গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে, নাইক্ষ্যংছড়ির ফুলতলি, ভালুক্কায়া, বাইশারী, তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, আশারতলী, জামছড়ি, বম্বনিয়া এবং রামু উপজেলার হাজিরপাড়া ও মৌলভীরকাটা। এর মধ্যে হাজিরপাড়া ও মৌলভীকাটা দিয়ে মিয়ানমারের সিগারেট ও অস্ত্র পাচার হয়ে থাকে। স্থানীয় প্রভাবশালী একাধিক ব্যক্তি সীমান্তের এই এলাকাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে।

অনুসন্ধান করে জানা গেছে, কচ্ছপিয়ার ৭নং ওয়ার্ডের হাজিরপাড়া গ্রামের মো. এরশাদ উল্লাহ, আনোয়ার হোসেন রাসেল, একই ইউনিয়নের দৌছড়ি দক্ষিণকুল গ্রামের ফরিদুল আলম। মূলত এদের নেতৃত্বে দৈনিক কোটি কোটি টাকার মিয়ানমার থেকে সিগারেট আসছে বলে জানান স্থানীয়রা।

কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ মৌলভীকাটার ইয়াছিন আরাফাত রিসাদ, ফাক্রিকাটা এলাকার নুরু, দক্ষিণ দৌছড়ীর আব্দুর রহিম, হাজী পাড়ার নুরুল আলম ও একই গ্রামের আবু তালেব। এই ৬ জন ওই চোরাকারবারি আলাদাভাবে অন্য একটি সিন্ডিকেট পরিচালনা করে থাকে।

সম্প্রতি গর্জনিয়ায় মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে আসা সিগারেট পাচারকারী চক্রের সদস্যদের সঙ্গে ডাকাতদলের সদস্যদের গোলাগুলিতে আবুল কাশেম নামের একজন নিহত হওয়ার পর ওই এলাকায় এখন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে চোরাচালান চক্র নিয়ে।

এই চক্র মূলত সিগারেট, ভাড়ায় অস্ত্র আনা-নেওয়া, সোনার বার ও গরু চোরাচালান করে থাকে। আর এই কাজে প্রধান সহযোগীর ভূমিকা পালন করে আসছে সীমান্তে বসবাসকারী কতিপয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতারা।

অভিযোগ রয়েছে, সরকারি দল এবং বিরোধী দলের কতিপয় এইসব রাজনৈতিক নেতারা উৎকোচের বিনিময়ে চোরাচালান সিন্ডিকেটকে মদদ দিচ্ছে।

গত ২ জুন রাতে গর্জনিয়া সীমান্তে বিজিবির সঙ্গে গোলাগুলিতে নেজাম নামের এক ডাকাত ও চোরাকারবারি নিহত হওয়ার নেপথ্যে ছিল সিগারেট পাচারকে কেন্দ্র করে।

বিজিবির দাবি, ডাকাত দলের সদস্য নেজাম বিজিবির টহল দলের উপরে গুলি ছুঁড়ে। পরে আত্মরক্ষার্থে বিজিবি পাল্টা গুলি ছুঁড়লে নেজাম ডাকাত নিহত হয়। এর আগে চোরাকারবারির টাকা ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে একাধিক সংঘর্ষ যেন গর্জনিয়া সীমান্ত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

এ ঘটনায় গত ৪ জুন রামু থানায় মামলা দায়ের করেছে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবির হাবিলদার মো. হুমায়ুন কবির। মামলায় নিহত নিজাম উদ্দিনকে প্রধান আসামি করে ১৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও দেড়-দুইশ জনকে আসামি করা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় চোরাচালানের ঘটনা নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে একাধিক নিহতসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হয়ে আসলেও দায়েরকৃত অধিকাংশ মামলায় চোরাকারবারিরা আসামি না হওয়ায় নতুন করে উৎসাহিত হয়ে চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ছে তরুণেরা।

জানা গেছে, মিয়ানমার সীমান্তবর্তী গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের একাধিক গ্রামের কয়েকটি সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্র প্রকাশ্যে এসব পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যাদের মাধ্যমে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার মিয়ানমারের সিগারেট ঢুকছে বাংলাদেশে আর বাংলাদেশি পণ্য পাচার হচ্ছে মিয়ানমারে। এসব চোরাকারবার রাতে ও দিনে চলছে প্রতিনিয়ত। এককথায় চোরা কারবারিদের স্বর্গরাজ্য এখন গর্জনিয়া সীমান্ত।

তবে বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে চোরাচালানের গরু জব্দ করলেও এরশাদ উল্লাহদের মত চোরাকারবারির মাস্টারমাইন্ড রয়েছে নাগালের বাইরে। প্রতি রাতেই কোটি কোটি টাকার সিগারেট চোরাই পথে মিয়ানমার থেকে আসছে। এসব সিগারেট রাতে এমনকি দিনের বেলায় প্রকাশ্যে পাচার করা হয় দেশের বিভিন্ন জায়গায়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পরে রামু-গর্জনিয়া রাস্তা দিয়ে চোরাচালানের কাজে ব্যবহৃত শত শত গাড়ি চলাচল করায় গুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তায় সব ধরনের যানবাহন ও জনচলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এরশাদ উল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু তাহের দেওয়ান বলেন, আমরা চোরাচালান প্রতিরোধে প্রতিদিন মাঠে তৎপর রয়েছি। গত কয়েকদিন আগে আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চোরাকারবারিরা চোরাচালানে বেপরোয়া হয়ে উঠলে আমরা তা কঠোর হস্তে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছি।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, আমি যোগদানের পর থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি অপরাধ বন্ধ করতে। আপনি তথ্য উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করেন৷ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷

ইএইচ