লিবিয়ায় থাকা নাটোরের গুরুদাসপুরের চারজন প্রবাসী শ্রমিককে জিম্মি করে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে পরিবারের কাছে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিলো। গত শনিবার আমার সংবাদ পত্রিকায় `নাটোরের চার যুবক লিবিয়ায় জিম্মি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সংবাদটি নজরে আসে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। এরপর বাংলাদেশ সময় রোববার সাড়ে ১১টায় লিবিয়া’র স্থানীয় প্রশাসন জিম্মি থাকা প্রবাসী চারজন শ্রমিককে উদ্ধার করেন।
এ সময় অপহরণকারীদের মধ্যে লিবিয়া’র দুজন ও বাংলাদেশের দুই জনসহ মোট চারজনকে আটক করে লিবিয়া’র স্থানীয় প্রশাসন। প্রবাসীদের পরিবারের বরাত দিয়ে গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. উজ্জ্বল হোসেন জিম্মি থাকা প্রবাসীদের উদ্ধার ও অপহরণকারী চারজনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
প্রবাসী সোহানের মা রুলি বেগম জানান, গত ২ জুন তার ছেলেসহ প্রতিবেশী আরও তিনজন প্রবাসী যুবককে লিবিয়ায় অপহরণ করা হয়। তারপর নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে চার জনের জন্য ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায় অপহরণকারীরা। সন্তানদের এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পরেছিলেন তিনিসহ তিন প্রবাসীর পরিবার। এরপর গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। রোববার সকাল সাড়ে দশটার দিকে অপহরণকারীদের দেওয়ার জন্য চার পরিবারের পক্ষ থেকে চার লাখ টাকা জোগাড় করে গুরুদাসপুরের একটি স্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন তারা।
এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে লিবিয়া থেকে তার মোবাইলের ইমো নাম্বরে তার ছেলে সোহান একটি ভিডিও বার্তা পাঠান। সেখানে সোহান বলে, ‘আব্বা আমাদের লিবিয়ার স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনী অপহরণকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার করেছে। তোমরা চিন্তা করো না। আমরা এখন নিরাপদে আছি’। এ কথা শোনার পরপরই ব্যাংকে না গিয়ে টাকা নিয়ে বাড়িতে ফিরেন আসেন এবং প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধার নেওয়া টাকা সকলেই ফেরত দেন। এমন খুশির খবরে প্রাণ ফিরে পেয়েছে সকল প্রবাসীর পরিবার ও স্বজনরা। তিনি সরকার, গণমাধ্যম ও লিবিয়া প্রশাসনের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন।’
আরও এক প্রবাসী বিদ্যুৎ এর মা বিউটি বেগম জানান, তার স্বামী অনেক পূর্বে থেকেই লিবিয়ায় শ্রমিক হিসাবে কাজ করতো। পরবর্তীতে তার ছেলেসহ প্রতিবেশী আরও তিন যুবক এক সঙ্গে লিবিয়ায় যান শ্রমিক হিসাবে। তার ছেলেও অপহরণের শিকার হয়েছিলেন। অপহরণ হওয়ার পর থেকেই পরিবার ও স্বজনদের আহাজারি থামছিল না। রোববার সকাল সাড়ে ১১টার সময় তার স্বামী তাকে কল করে জানায় তার ছেলে সহ চারজনকেই লিবিয়ার স্থানীয় প্রশাসন উদ্ধার করেছে। রাতের মধ্যেই তার স্বামীর কাছে হয়তো ফিরে যাবে তার সন্তানসহ প্রতিবেশীদের সন্তানরাও।
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. উজ্জ্বল হোসেন জানান, ঘটনার পর থেকেই তিনি এ বিষয়ে তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছিলেন। নাটোর পুলিশ সুপারের নির্দেশে শুরু থেকে আজ পর্যন্ত পরিবারগুলোর সাথে থানা পুলিশ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছে।
ইএইচ