ফেনীতে কোরবানির জন্য ৮৭ হাজার ২০০টি পশুর চাহিদার বিপরীতে প্রস্তুত করা হয়েছে ৯০ হাজার ২৫০টি গবাদি পশু।
সোমবার জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আগামী ১৭ জুন পবিত্র ঈদুল আযহা পালিত হবে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ফেনী জেলায় চাহিদার তুলনায় কিছু পশু বেশি প্রস্তুত রয়েছে। স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের জরিপে ৮৭ হাজার ২০০টি পশুর চাহিদার বিপরীতে বাণিজ্যিক ও পারিবারিকভাবে লালনপালন করা ৬৮ হাজার ৮০৪টি গরু, ৫ হাজার ৭২৮টি মহিষ এবং ১৫ হাজার ৭১৮টি ছাগল ও ভেড়াসহ মোট ৯০ হাজার ২৫০টি গবাদি পশুর কথা তুলে ধরা হয়েছে।
এদিকে জেলার দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের নেয়াজপুর ডেইরি এন্ড এগ্রোর খামারি আবদুল মতিন আজগরের দাবি, ঈদকে সামনে রেখে চলতি মাসে সীমান্ত পথে ভারত ও দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে আরও বেশকিছু পশু ফেনীর বিভিন্ন উপজেলার মৌসুমেী ব্যবসায়ীরা এনে ঢুকিয়েছে। এতে স্থানীয় প্রান্তিক খামারিদের লোকসান গুনতে হতে পারে।
ছাগলনাইয়ার খামারি আদর চৌধুরী বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার প্রতি বস্তা খাদ্যে হাজারেরও বেশি টাকা বেড়ে গেছে। সেই হিসেবে দামও কিছুটা বেশি হবে। সীমান্ত দিয়ে গরু প্রবেশ না করলে লাভবান হবেন খামারিরা।
পরশুরামের খামারি মো. মীর হোসেন মিরু বলেন, কোরবানির জন্য ১৩টি গরু এবং ৮টি ছাগল প্রস্তুত করেছি। বাজারদর অনুকূলে থাকলে আশা করি ভালো দাম পাব।
আজিজুল হক সৈকত নামে আরেক খামারি বলেন, কোরবানির শেষ সময়ে বাইরে থেকে গরু আসার কারণে আমাদের প্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। এমন কিছু হলে নতুন উদ্যোক্তারা এ খাত হতে মুখ ফিরিয়ে নেবে। সীমান্তে আরও নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোরবানির পশু বিক্রিতে এবার জেলার খামারি ভিন্ন ভিন্ন কৌশল নিচ্ছেন। মোহাম্মদ মহসিন নামে এক খামারি বলেন, ইতোমধ্যে তার বেশিরভাগ গরু বিক্রি হয়ে গেছে। অনেকে আগে এসেই পশু কিনে রাখছে। কোরবানির আগের দিন পর্যন্ত পশুগুলো খামারে রাখতে কেউ কেউ তাকে অতিরিক্ত খরচও দিয়েছেন। অন্য ক্রেতারা নির্ধারিত মূল্যের কিছু পরিশোধ করে বাকিগুলো নেওয়ার সময় খামারে এসে লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে পশুর দৈহিক ওজন মেপেও নির্ধারণের সুযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে এবার পশুর বাজার মূল্যে প্রভাব পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জেলার খামারিরা। তবে, পশুর জোগান বেশি থাকায় ঈদ বাজার খামারি ও ক্রেতা উভয়ের অনুকূলে থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক দেশের বাহির থেকে অবৈধ উপায়ে গরু আমদানি বন্ধ রাখতে হবে। এ বিষয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। গরু আমদানি বন্ধ করা গেলে খামারিরা লাভবান হবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক জানান, জেলায় ৫ হাজার ২৪৬ জন তালিকাভুক্ত খামারির বাইরেও ব্যক্তিগতভাবে অনেকে এক বা একাধিক পশু লালনপালন করছেন। আসন্ন কোরবানি উপলক্ষ্যে জেলার প্রায় দুই শতাধিক পেশাদার ও মৌসুমি কসাইকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চামড়া সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ বিষয়ে অবহিতকরণ সভা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কোরবানিতে গরু-ছাগলের পাশাপাশি ফেনীতে মহিষের চাহিদাও রয়েছে। কোরবানির জন্য জেলায় ৫ হাজার ৭২৮টি মহিষ প্রস্তুত রয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন রোগের টিকা, খামারি প্রশিক্ষণ, কারিগরি সহযোগিতা, কেমিক্যাল, হরমোন ও স্টেরয়েড সংক্রান্ত জনসচেতনতা তৈরি করতে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া দপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠপর্যায়ে খোঁজখবর রাখছে।
ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, আমাদের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে পশু প্রস্তুত রয়েছে। সীমান্ত পথে অবৈধভাবে যেন কোনো গরু প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে বিজিবিকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ফেনীস্থ ৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা জানান, সীমান্তে গরু প্রবেশ বন্ধে বিজিবি সদস্যদের টহল জোরদার করা হয়েছে।
ইএইচ