প্লান্ট বিকলের কারণে বরিশালে বিদ্যুৎ বিপর্যয়

বরিশাল ব্যুরো প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২৪, ০৪:৩৮ পিএম

পায়রা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের একটি প্লান্ট বিকল হওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে বরিশালের সর্বত্র বিদ্যুৎ সরবরাহে বিপর্যয় ঘটেছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অর্ধেক সময়ও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। এ অবস্থায় সাধারণ গ্রাহকদের পাশাপাশি চরম ভোগান্তিতে পরেছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা।

গত ২৪ জুন দিবাগত মধ্যরাত থেকে এমন অবস্থা চলছে শহর-গ্রাম সর্বত্রই। চলমান তীব্র ভ্যাপসা গরমের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আগামী এক সপ্তাহেও অবস্থার উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে নিশ্চিত করেছেন ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) বরিশালের গ্রিড স্টেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

সূত্র মতে, ওজোপাডিকো’র বরিশালের গ্রিড স্টেশনের আওতায় বরিশাল ও ঝালকাঠিতে চাহিদার বিপরীতে অর্ধেকের কিছু বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় ২০ ভাগ হারে লোডশেডিং দেওয়ার দাবি করা হলেও বাস্তবে লোডশেডিং অনেক বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

গ্রিড স্টেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান পলাশ বলেন, পায়রার দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি বন্ধ রয়েছে। দুটি থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট করে মোট ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। এ বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে বরিশাল, ঝালকাঠি, গোপালগঞ্জসহ কিছু কিছু জায়গায় সরবরাহ করা হয়।

তিনি আরও জানান, একটি প্লান্ট বন্ধ থাকায় পায়রায় উৎপাদন অর্ধেক কমেছে। এ জন্য বরিশালে প্রায় ৫৮০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ৪৫০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট সরবরাহ করা যাচ্ছে। আগামী মাসের ৩-৪ তারিখের মধ্যে বিকল প্লান্টটি সচল হতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বরিশাল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র-১ এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী দীপক মিস্ত্রি বলেন, তাদের আওতাধীন বরিশাল, ঝালকাঠি ও নলছিটিতে বিদ্যুতের চাহিদা ৮২ মেগাওয়াট কিন্তু সরবরাহ পাচ্ছেন ৫৬ মেগাওয়াট। যে কারণে বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

বরিশাল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র-২ এর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, গত দুইদিনে তারা চাহিদার অর্ধেকের বেশি বিদ্যুৎ পেয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের ভ্যাপসা গরম ও লোডশেডিংয়ে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। বিশেষ করে গভীর রাতে বিদ্যুৎ বন্ধ হওয়ায় নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে।

বরিশাল শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আগামী রোববার থেকে শুরু হবে এইচএসসি পরীক্ষা। অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে পরীক্ষার্থীদের পড়াশুনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

নগরীর অধিকাংশ অভিভাবকরা জানিয়েছেন, দিন-রাত মিলিয়ে কয়েকদিনের অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পরেছে। পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ব্যাহত হচ্ছে। একদিকে তীব্র গরম অপরদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে মানসিক চাপে পড়েছে পরীক্ষার্থীরা।

ওজোপাডিকো’র বরিশাল অঞ্চলের পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আব্দুল মজিদ বলেন, আমাদের চাহিদা ১০০ মেগাওয়াট। সেখানে পাচ্ছি ৭০ মেগাওয়াট। ফলে লোডশেডিং দিয়ে তা ম্যানেজ করতে হচ্ছে। একইভাবে ভোলায় ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুৎ মিলিয়ে ১৩০ মেগাওয়াট চাহিদা থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে ৯৬ মেগাওয়াট।

ওজোপাডিকোর ভোলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ বলেন, আমরা আগে কুইক রেন্টাল থেকে ৪০ এবং বোরহানউদ্দিন উপজেলার ২২৫ মেগাওয়াটের গ্যাসভিত্তিক উৎপাদনকেন্দ্র থেকে ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেতাম। কিন্তু কুইক রেন্টাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন বিদ্যুতের ঘাটতি থাকছে। ফলে লোডশেডিং দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে।

দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায়। বাংলাদেশ-চায়না বিদ্যুৎ কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০২২ সালের মার্চে উৎপাদনে যায়। গত ২৬ জুন থেকে কেন্দ্রটির একটি ইউনিট নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে সরবরাহ ব্যবস্থায়।

ওই কেন্দ্রের সহকারী ব্যবস্থাপক (তদন্ত) শাহ মনি জিকো বলেন, পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি একটি বড় প্রকল্প। এই প্ল্যান্টের উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ দরকার। এজন্য ২৬ জুন থেকে প্ল্যান্টের ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট বন্ধ করে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ জন্য সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ গ্রাহকদের একটু কষ্ট সহ্য করতে হবে।

ইএইচ