পিরোজপুরের নাজিরপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে জসীম খান নামের যুবককে হত্যার দায়ে স্বামী-স্ত্রী-সন্তানসহ সাতজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় ১০ জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (১ জুলাই) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. মোক্তাগীর আলম আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার হাতেম আলী শেখের ছেলে দেলোয়ার শেখ (৪৮), হাসেম শেখের ছেলে আবুল শেখ (৫৮), মোজাম মল্লিকের ছেলে বাবুল মল্লিক (৪৯), আফসার আলী শেখের ছেলে সিরাজুল হক শেখ (৭১), সিরাজুল হক শেখের ছেলে রাজু শেখ (৩১), সিরাজুল হক শেখের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৫৮) ও বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার রসুল শেখের ছেলে জাফর শেখ (৫৮)।
খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন- জহুর শেখ, হাজেরা খানম, ইমারত খান, রাবেয়া বেগম, সোহাগ খান, সুমন খান, মঞ্জু বেগম, বাবু মীর, আবদুর রব শেখ ও জাফর শেখ। এ ছাড়া মামলা চলাকালে রাজ্জাক মল্লিক ও হাতেম আলী শেখ নামে দুই আসামির মৃত্যু হয়।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৫ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে জসীম খান ও তার ভাই রাজু খান নাজিরপুর উপজেলার পাতিলাখালি গ্রামে তাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে সামনের রাস্তায় যাচ্ছিলেন। এ সময় পূর্বশত্রুতার জের ধরে আগে থেকে ওত পেতে থাকা আসামিরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এ সময় তারা জীবন রক্ষার্থে দৌড়ে ঘরে উঠতে গেলে ঘরের সামনে হাতেম আলী শেখ ও দেলোয়ার শেখ জসীমকে হত্যার উদ্দেশ্যে হাতে থাকা দা দিয়ে মাথায় কোপ দিয়ে জখম করলে জসীম মাটিতে পড়ে গেলে তাকে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়। এ সময় তাদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা জসীমকে টেনে হাতেম শেখের ঘরের বারান্দায় নিয়ে আটকে রাখে। প্রতিবেশী রেজবী খান জসীমের চাচাতো ভাই ওয়াহিদুজ্জামানকে ফোনে ঘটনা জানালে তিনি স্থানীয় থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে জসীমকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে জহুর শেখ, দেলোয়ার শেখ, হাতেম আলী শেখ, সিরাজ শেখ ও রব শেখকে আটক করে।
এ ঘটনায় ওই দিনই নিহত জসীমের ভাই রাজু খান বাদী হয়ে ২২ জনকে আসামি করে নাজিরপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে এ ঘটনায় ২০১১ সালের ৭ আগস্ট নাজিরপুর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল মালেক হাওলাদার ১৯ জনকে আসামি করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) জহুরুল ইসলাম জানান, ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত সকল আসামির উপস্থিতিতে আজ এই রায় দেন। তদন্ত প্রতিবেদনে আসা ১৯ জন আসামির মধ্যে মামলা চলাকালীন দুই আসামির মৃত্যু হয়। বাকি ১৭ জনের মধ্যে সাতজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ জনকে খালাস দেন আদালত।
আসামিপক্ষের আইনজীবী কাজি ইলিয়াস হোসেন বলেন, আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট নই। রায়ের বিপক্ষে উচ্চ আদালতে আপিল করবো।
আরএস