বন্যায় ভাসছে রাজীবপুর

রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২৪, ০৬:৪৫ পিএম

চলমান বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে পানিতে ভাসছে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলা। ব্রহ্মপুত্র নদে চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি বাড়ার সাথে সাথে প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। রাজীবপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রবেশ করেছে বন্যার পানি। উপজেলা খাদ্যগুদাম চত্বরেও বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। গুদামে মজুদ করা চাল ভিজে নষ্ট হতে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।

উপজেলায় তিনভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। চলমান মাধ্যমিক স্কুলের ষান্মাসিক মূল্যায়নের কার্যক্রমসহ সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে এ উপজেলায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড কুড়িগ্রাম থেকে জানা গেছে আরও ২৪ ঘণ্টা পানি স্থিতিশীল অবস্থায় থাকবে।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, রাজীবপুর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ৮০ ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে গ্রামীণ রাস্তাঘাটসহ আবাদি ফসলি জমি। বন্যা দুর্গতদের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। চরম দুর্ভোগের মধ্যে গবাদিপশু নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বন্যা কবলিত মানুষজন।

কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুর বিলপাড়া গ্রামের শাহ আলম বলেন, ‘তিনদিন থিকা ঘরের মধ্যে পানি। রান্না করার কোনো জো নেই। ঘরের মধ্যে মাচা বানিয়ে বউ বাচ্চা নিয়া খেয়ে না খেয়ে আছি। এখনও কেউ দেখবার আইলো না। কোনো ত্রাণও পাইনি আমরা।

একই এলাকার আবু বকর, মোখলেছ জানান, চরের সব জায়গাতে বন্যার পানি। গরু ছাগল নিয়ে বিপদে আছি।

রাজীবপুরের নুরু ফকিরের চরের রোকেয়া বেগম বলেন, ‘তিনদিন ঘরের মাচার ওপর ছিলাম। আইজ পানি মাচায়। কোথাও আশ্রয় না পেয়ে ঘরের ধর্ণার ওপর মাচা বানাইয়া আছি।

ওই চরের হালিমা, নাছিমা জানান, আমরা মাচার ওপর ছিলাম মাচায় পানি ওঠায় পরে ঘর ছাইরা দিয়া ঢাকাইয়া পাড়া গ্রামের বদির বাড়িতে উঠছি। আমাদের চরে কেউ ত্রাণ নিয়া আইসে নাই। ওই একই চরের জামাল উদ্দিন নামের এক দিনমজুর বলেন, ‘আমাদের ঘরেও বন্যার পানি। কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাই নাই।’

কোদালকাটি ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ছক্কু ও মোহনগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানান, আমাদের এলাকার ৯০ ভাগ বন্যা কবলিত। যে পরিমাণ ত্রাণ দিয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। আরও ত্রাণের দাবি জানান ওই দুই চেয়ারম্যান।

রাজীবপুর উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজীবপুর উপজেলার ২৫ হাজার পরিবারের ৭০ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শনিবার পর্যন্ত রাজীবপুর উপজেলার ৩ ইউনিয়নে ১৫ টন চাল সঙ্গে ১৩০০ পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

রাজীবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিউল আলম ও নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ জানান, বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এ বিতরণ চলমান রয়েছে।

ইএইচ