বৃদ্ধকে জবাই করে হত্যা: ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ৩

নোয়াখালী প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২৪, ০৭:৫৭ পিএম

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে বৃদ্ধ আব্দুল খালেক ওরফে খাজা মিয়াকে (৮০) জবাই করার ১৩ দিন পর ক্লুলেস এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য মোবাইল কলের সূত্রধরে উদঘাটন করেছে পুলিশ। একই সাথে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।  

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, উপজেলার চররশিদ গ্রামের মন্তাজ মিয়ার বাড়ির মো.জয়নাল আবেদীরে ছেলে আইয়ুব আনছারী (২৯), পশ্চিম চরজব্বর গ্রামের শফিক উল্যার ছেলে আব্দুল হাকিম (২৩) ও একই গ্রামের রেজাউল হক চৌধুরীর ছেলে মো.রাজু (২২)।

রোববার বিকাল ৫টায় নোয়াখালী পুলিশ সুপার কার্যালয়ের হলরুমে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন।

নিহত খাজা মিয়া উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চর রশিদ গ্রামের খালেক মিয়ার বাড়ির মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। তিনি ৫ সন্তানের জনক ছিলেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ জানায়, বৃদ্ধ খাজা মিয়ার হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার দুই দিন আগে তার ছোট ছেলে আব্দুল্যার মোবাইলে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসে এবং তার বাবাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পুলিশ ওই মোবাইল নম্বরের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আসামি আইয়ুব আনছারীকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

জিজ্ঞাসাবাদের আইয়ুব আনছারী এই হত্যাকাণ্ডে তার সহযোগী হিসেবে আব্দুল হাকিমের নাম প্রকাশ করে। পরবর্তীতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আব্দুল হাকিমকে উপজেলার কাঞ্চন বাজার এলাকা থেকে আটক করে। এরপর পুলিশ দুই আসামিকে আদালতে উপস্থাপন করলে আদালত আইয়ুবকে ৪ দিন ও আব্দুল হাকিমের ৩ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করে।

পুলিশ জানায়, রিমান্ডে থাকা আসামি আব্দুল হাকিম পুলিশের কাছে আরও একজনের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য দেয়। তার ভাষ্যমতে অপর আসামি মো. রাজুকে আটক করে। এরপর রাজুকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে রাজু পুরো ঘটনা পুলিশের কাছে স্বীকার করে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ আরও জানায়, আসামি আইয়ুব আনছারী অপর দুই আসামিকে আব্দুল খালেক খাজা মিয়াকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা জানায় এবং কে কি দায়িত্ব পালন করবে তা বণ্টন করে দেয়। আব্দুল হাকিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয় কাঞ্চন বাজারে ভিকটিমের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য। বিনিময়ে আইয়ুব আনছারী আব্দুল হাকিমকে নগদ ২ হাজার টাকা দেয় এবং কাজ হয়ে গেলে আরও টাকা দিবে মর্মে জানায়।

অপর সহযোগী রাজুকে পরবর্তীতে ৫ হাজার টাকা দিবে বলে আশ্বস্ত করে। ঘটনার দিন গত ৬ জুলাই শনিবার বিকাল ৪টা থেকে আব্দুল হাকিম কাঞ্চন বাজারে ভিকটিমকে খোঁজাখুজি শুরু করে। মাগরিবের নামাজের পর আব্দুল হাকিম খাজা মিয়াকে জিরো পয়েন্টে দেখতে পেয়ে বিষয়টি আইয়ুব আনছারীকে জানায়।

এর কিছুক্ষণ পর রাত ৮টার দিকে ভিকটিম আব্দুল খালেক খাজা মিয়াকে আবুল কালামের সাথে জিরো পয়েন্টে দেখে নিশ্চিত হয়ে ভিন্নপথে দ্রুত ঘটনাস্থল সংলগ্ন মাদরাসার সামনে থাকা আইয়ুব আনছারীর সাথে রাত সাড়ে ৮টার দিকে গিয়ে মিলিত হয়। এর ২-৩ মিনিট পর অপর সহযোগী রাজু সেখানে উপস্থিত হয়। পরবর্তীতে তিনজনই ভিকটিম আসার অপেক্ষায় ভিকটিম খাজা মিয়ার বাড়ির প্রবেশের রাস্তায় খড়ের স্তূপের পিছনে ওৎ পেতে থাকে।

নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন বলেন, হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আইয়ুব আনছারী খড়ের স্তূপের পিছন থেকে বের হয়ে ভিকটিমকে আক্রমণ করে। আইযুব আনছারী ডান হাত দিয়ে ভিকটিমের সামনে থেকে গলা চাপ দিয়ে ধরে এবং বাম হাত দিয়ে ভিকটিমের পিঠে ছুরিকাঘাত করে। ছুরিকাঘাতের ফলে ভিকটিমের হাতে থাকা বেতের লাঠিটি পড়ে গেলে ভিকটিম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরই মধ্যে আইয়ুব আনছারী ভিকটিমের তলপেটের বাম পার্শ্বে উপর্যুপরি দুইবার ছুরিকাঘাত করে। তখন খড়ের স্তূপের আড়াল থেকে আব্দুল হাকিম ও রাজু (২২) এসে আসামি আইয়ুব আনছারীর নির্দেশে আসা আব্দুল হাকিম (২৩) ভিকটিমের বাম হাত মাটিতে চেপে ধরে এবং মো. রাজু ভিকটিমের মাথা চেপে ধরলে আসামি আইয়ুব আনছারী ভিকটিমের বুকের উপর হাঁটু গেড়ে বসে ডান হাত দিয়ে ভিকটিমের গলার সামনের অংশে ছুরি চালিয়ে জবাই করে হত্যা করে। আভিযানিক দল পুলিশ রিমান্ডে থাকা আইয়ুব আনছারীর দেওয়া তথ্যমতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার।

ইএইচ