দেশে কৃষিতে যুক্ত হয়েছে যান্ত্রিকীকরণ। ফলে, গরুর বদলে ট্রাক্টর দিয়ে চলছে জমি চাষাবাদ।
জমি চাষের সময় ট্রাক্টরের ফলার আঘাতে ভেসে ওঠে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। আর এসব মাছ ধরার উৎসবে মেতেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে বিদ্যালয় বন্ধ হওয়া ঘরবন্দি শিশু শিক্ষার্থীরা।
কাঁদামাটিতে শিশুদের কচি পায়ের স্পর্শে মুখরিত বিস্তীর্ণ মাঠের এ দৃশ্য দেখে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছেন উপস্থিত অনেক কৃষক। তাই মাছ ধরার উৎসবে মাতোয়ারা শিশুদের বাধা দিচ্ছেন না অভিভাবকেরাও। উপজেলার বেশিরভাগ এলাকাজুড়ে এখন এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, তাই প্রতিদিন মাঠে দল বেঁধে মাছ ধরতে যায় বলে জানিয়েছে শিশুরা।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের নিজপাড়া গ্রামের নিজপাড়া-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র উদয় রায় বলে, ‘স্কুল বন্ধ, তাই জমিতে চাষ দেওয়ার সময় ট্রাক্টরের শব্দে দল বেঁধে মাঠে ছুটে যাই। জমিতে নেমে কে কত মাছ কুড়াতে পারে, এ নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় এক কেজি বিভিন্ন জাতের মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি।’
একই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মহাদেব রায় বলে, ‘সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে বিদ্যালয় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা দেয়। তাই এলাকার বন্ধুরা মিলে বাড়ির পাশে জমিতে মাছ ধরতে যাই। মাছ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে অনেকে আমাদের কাছে মাছ কিনে নিতে চায়। কিন্তু আমরা বাড়ির জন্য মাছ ধরি। আমরা মাছ ধরে বাড়িতে নিয়ে আসায় বাজার থেকে আর কিনতে হয় না।’
শিক্ষার্থীদের অভিভাবক লক্ষ্মী কান্ত রায় বলেন, ‘বর্ষাকালে কাঁদামাটিতে মাছ ধরার উৎসবে মেতে ওঠে আমাদের গ্রামীণ জনপদের মানুষ। এটি আমাদের আবহমান বাংলার সংস্কৃতি। কিন্তু বর্তমানে মানুষের নানাবিধ ব্যস্থতার কারণে এ দৃশ্য খুব একটা চোখে পড়ে না। বিশেষ করে আমাদের শিশুরা এসব উৎসব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার এতে সকল কোমলমতি শিশুরা একপ্রকার ঘরবন্দি হয়ে আছে। তবে এ মাছ ধরার উৎসব তাদের বন্দিজীবনে কিছুটা আনন্দের সঞ্চার হয়েছে। এসব উৎসব শিশুদের মানসিক প্রশান্তির খোরাক জোগাবে। এতে করে তাদের মনের অস্থিরতা কমবে।’
ইএইচ