কোটা আন্দোলন ঘিরে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ মেরুদণ্ডহীন দলের অবস্থানে রয়েছে বলে আলোচনা চলছে সর্বত্র।
প্রশ্ন উঠছে টানা ক্ষমতায় থাকা দলটি শক্তি সামর্থ্য নিয়ে। ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ দলটির এমন অবস্থান নিয়ে অনুসন্ধান করে দৈনিক আমার সংবাদ।
চট্টগ্রাম আ.লীগের বিপরীতে বিএনপি বা জামায়াতের চেয়ে নিজ গৃহের শত্রু বিভীষিকা। এই পরিস্থিতির জন্য সর্ষের মধ্যে ভূত হলে ভূত তাড়াবে কে?
চট্টগ্রাম মহানগর আ.লীগ দুইটি ধারায় প্রবাহিত। প্রয়াত মেয়র ও নগর আ.লীগ সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাবেক মেয়র ও আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন।
এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী গত হওয়ার পর তার ছেলে কেন্দ্রীয় আ.লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল নেতৃত্ব দেন।
এই দুইটি শক্তিশালী ধারা থেকে প্রথমে আ জ ম নাছির উদ্দিনকে কোণঠাসা করার ফলে প্রাণহীন হয়ে পড়েন আ জ ম নাছির উদ্দিন অনুসারী।
তার কাছ থেকে দল প্রথমে কেড়ে নেন মেয়রের পদ।এ রপর সাংসদ হওয়ার চেষ্টা করেও তিনি সফল হতে পারেন নাই। দল তাকে মনোনয়ন দেন নাই। শেষ পর্যন্ত বোয়ালখালী আসনে ছিলেন তার অনুসারী সাংসদ। কিন্তু তাও কৌশলে কেড়ে নেন দল।
শেষে থাকল নগর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ। আগামীতে তাও চলে যাবেন এমন সংশয় তার অনুসারী অনেকের। এইভাবে নিজ দলের কর্মীবান্ধব জনপ্রিয় এমন নেতাকে পর্যায়ক্রমে কোণঠাসা করেছেন দলের হাইকমান্ড। যার ফলশ্রুতিতে বর্তমান যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে।
তারা মেয়রের পদে যাকে বসান বর্তমান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র (চসিক) বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী। নগরবাসীর কাছে ছিলেন সম্পূর্ণ অপরিচিত মুখ তিনি। নেই কোন দলী অনুসারী। এছাড়া তিনি মেয়ের হওয়ার পর নগরের জন্য উল্লেখযোগ্য বা দৃষ্টি কাড়ে এমন কোন কিছু করতে দেখা যায়নি।
জলাবদ্ধতা, ডেঙ্গু, হোল্ডিং ট্যাক্স ইত্যাদি সমস্যা উল্টো যন্ত্রদায়ক হয়ে উঠেছেন। তবে তিনি শিক্ষা মন্ত্রীর সাথে আছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু। তিনি চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে সাংসদ হয়েছেন। তিনিও শিক্ষা মন্ত্রীর অনুসারী ছিলেন।
তবে রহস্যময় তিনি শিক্ষা মন্ত্রীর সাথে আপততে নেই বলে দল ও দলের বাইরে জনশ্রুতি রয়েছে। এতে তিনি সাংসদ হয়েও কোণঠাসায় রয়েছেন।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে চসিকের সাবেক প্রশাসক ও চট্টগ্রাম মহানগরের ১৪ দলের সমন্বয়ক খোরশেদ আলম সুজনের নাম প্রচার হয়েছিলো। পরে চেয়ারম্যান হিসেবে প্রজ্ঞাপন আসে বর্তমান সিডিএ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছের। তারও দলীয় কর্মীর কোন অবস্থান দেখা যায়নি। যদিও তিনি আ.লীগ নেতা।
সর্বশেষ মহানগর যুবলীগের কমিটি নিয়ে রয়েছে আপত্তি। কর্মীবান্ধব বা জনপ্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি হওয়ায় নিষ্প্রাণ হয়ে পড়েছে মহানগর যুবলীগ। একই অবস্থা ছাত্রলীগে। নেই কোন শৃঙ্খলা। টানা ক্ষমতায় থেকে চট্টগ্রাম আ.লীগ গৃহ বিবাধ ছাড়া কিছুই তৈরি করতে পারেন নাই। তবে চট্টগ্রাম আ.লীগ নেতা জনপ্রতিনিধি মেয়ের কাউন্সিলরসহ আ.লীগের কোলসে থাকা সকলে টাকার পাহাড় গড়েছেন বলে মানুষের মুখে মুখে।
তারা শুধু টাকার মেশিন হয়েছেন। দলের জন্য কর্মী মেশিন হতে পারেন নাই। এতো টাকার উৎস নিয়েও দল বা সরকারের পক্ষ থেকে তদারকি করতে দেখা যায়নি। সুতরাং চট্টগ্রাম নগর আ.লীগের যতো বিবাদ বিভাজন স্বয়ং কেন্দ্রীয় আ.লীগকে দায়ী করছেন সাধারণ নেতা কর্মী।
অর্থাৎ চট্টগ্রাম আ.লীগে ‘সর্ষের মধ্যে ভূত’।সর্ষের মধ্যে ভূতহলে ভূত তাড়ানোর মন্ত্র যার বা যাদের হাতে তারাই ভূত দিয়ে রাখলে আগামীতে আ.লীগ অবস্থা খুবই নাজুক হবে বলে মন্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
আ.লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, আ.লীগের নেতাকর্মীরা অভিমানী হতে পারে, বিশ্বাসঘাতক নয়। দলের যে কোন দুঃসময় বিবাদ বিভাজন ভুলে এক কাতারে আসবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
ইএইচ