ফেনীতে নিহত ৬, আহত অর্ধশতাধিক

এস এম ইউসুফ আলী, ফেনী থেকে প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২৪, ০৬:০০ পিএম

ফেনীতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলায় ৬ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, পথচারী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ আরও অন্তত অর্ধশতাধিক।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আরএমও সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এর আগে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রোববার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল অংশ দখলে নিয়ে নানা শ্লোগানে মুখরিত করে তোলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এ সময় জনসাধারণের জানমাল রক্ষায় সেখানে সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। বন্ধ হয়ে যায় মহাসড়কের দুপাশের যান চলাচল। একপর্যায়ে দুপুরে জোহরের আযান শেষে মহাসড়কেই জামায়াতে নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে আন্দোলনকারীদের।

এদিকে সকাল থেকে শহরের প্রাণকেন্দ্র ট্রাংক রোডস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরসহ পৌর এলাকায় অবস্থান নেয় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারি, পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীলের নেতৃত্বে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ একটি ককটেলের বিকট শব্দের পর শহরের বিএনপি পাড়া হিসেবে পরিচিত তাকিয়া রোড় থেকে ২-৩ জন কিশোর রামদা হাতে বেরিয়ে আওয়ামী পাড়া হিসেবে পরিচিত দাস পাড়া সড়কে ককটেল নিক্ষেপ করে।

এরপরই শহীদ মিনার এলাকা থেকে সরকার দলীয় সশস্ত্র নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়। কিছুপর আন্দোলনকারীদের একটি অংশ ট্রাংক রোডে ওঠার চেষ্টা করলে বন্দুক হাতে দলীয় কয়েকজনকে গুলি করতে দেখা গেছে।

তার কিছুক্ষণ পর দুপুর আড়াইটার দিকে জেলা যুবলীগ সভাপতি ও দাগনভূঞা উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতনের নেতৃত্বে মহাসড়কে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায় সরকার দলীয়রা।

এ ঘটনায় ৬ জন নিহত এবং শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের শতাধিক আহত হয়েছে।

এদের মধ্যে বিকাল ৫টা পর্যন্ত জেলা শহরের বারাহীপুর এলাকার অস্থায়ী বাসিন্দা ফুলগাজী উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ (১৯), সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে শিহাব উদ্দিন (১৮), ফাজিলপুর ইউনিয়নের রফিকুল ইসলামের ছেলে সাইদুল ইসলাম (২০), সোনাগাজী উপজেলার চর মজলিশপুর এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে শকিব (২১) ও আরাফাত এবং বিপ্লব নামে অপর দুইজনের লাশ মিললেও বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে ইটের আঘাতে আহত বাংলাভিশনের প্রতিনিধি রকিবুল ইসলাম, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ক্যামেরা পার্সন সুলতান মাহমুদ (২৩), জবাবদিহি পত্রিকার হাসনাত তুহিন (৪৫), ধলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার আহমেদ মুন্সি, পথচারী সাইফুল ইসলাম ও যুবদল নেতা সাইদুল ইসলাম (৩২) এবং আরও পাঁচজন গুলিবিদ্ধসহ অন্যান্যদের নাম জানা যায়নি। তবে, বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত জেলার কোথাও পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আরএমও আসিফ ইকবাল গণমাধ্যমকর্মীদের ৫ জনের লাশ মর্গে রয়েছে বলে নিশ্চিত করলেও এ ব্যাপারে আর কোন তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এছাড়া শ্রাবণ নামে অপর এক শিক্ষার্থীর মরদেহ তার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে নিহতের পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ ব্যাপারে ফেনীর পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম পিপিএমর মুঠোফোনে কল করেও তিনি রিসিভ না করায় বিস্তারিত জানা যায়নি।

ইএইচ