ফেনীতে পালাতে গিয়ে আ.লীগ নেতাসহ পৃথক ঘটনায় নিহত ৫

এস এম ইউসুফ আলী, ফেনী প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২৪, ০৮:৩৮ পিএম

ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার খবরে ফেনী থেকে পালাতে গিয়ে আ.লীগ নেতাসহ পৃথক ঘটনায় ৫ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ১ জন আওয়ামী লীগ, ৩ জন যুবলীগ নেতাকর্মী ও অপর ১ জন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক বলে জানা গেছে।

বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিহতদের স্বজনরা এসব মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছেন।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সোমবার জেলার বিক্ষুব্ধ জনতা স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দলীয় সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর শহরের মাস্টারপাড়াস্থ বাসভবনে হামলা শুরু করে।

এ সময় আতঙ্কিত হয়ে পাশের বাসার ছাদ থেকে লাফিয়ে পালানোর সময় নিচে পড়ে মৃত্যু হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ফেনী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর বাদল হাজারীর।

এর পরদিন মঙ্গলবার জেলার সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নের সাহেবেরহাট এলাকার একটি খাল থেকে মুশফিকুর রহমান নামে এক যুবলীগ নেতার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয়রা জানায়, একদিন পূর্বে ছাত্র-জনতার ১ দফা দাবিতে জেলা শহরে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দলীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত মুশফিকুর ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক পদে ছিলেন।

সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জহিরুল আলম বলেন, বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হলেও কেউ উদ্ধারে আসেনি। পরে নিহতের স্বজনদের ডেকে মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

একইদিন মুশফিকুর রহিম মিশু নামে এক যুবলীগ নেতার বোরকা পরিহিত মরদেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। ওইদিন দুপুরে উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সফরপুর গ্রামের কন্যার-মার পোল সংলগ্ন খাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নিহত মিশু ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক ও ধলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মুন্সির ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে স্থানীয় জনতা ধলিয়া বাজারে একটি বিজয় মিছিল বের করে। এরপর শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার খবরের পর এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা মিছিল শুরু করে ধলিয়া বাজারে অবস্থান নেয়। এ খবর পেয়ে এই যুবলীগ নেতা বাড়িতে আত্মগোপন করেন।

স্থানীয়দের ধারণা, প্রাণ বাঁচাতে পরবর্তীতে মিশু বোরকা পরে পালানোর সময় দুর্বৃত্তরা তাকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে তার মরদেহ খালে ফেলে দেয়।

জাফর রুবেল নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ব্রিজ পার হওয়ার সময় খালের পানিতে বোরকা পরা একটি মরদের ভাসতে দেখতে পায় স্থানীয়রা। পরে মরদেহটি মিশুর বলে শনাক্ত করেন এলাকাবাসী।

সোনাগাজীর নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জহিরুল আলম বলেন, মরদেহের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হলেও কেউ উদ্ধারে আসেনি। পরে স্বজনদের ডেকে মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে সোনাগাজী মডেল থানা ওসি সুদ্বীপ রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

অন্যদিকে ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়নে বাদশা মিয়া ওরফে কানা বাদশা (৪০) নামের যুবলীগের এক কর্মীর মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। নিহতের মাথায় ও হাতে জখমের চিহ্ন রয়েছে। তাকেও একই ঘটনায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন এলাকাবাসী। বালিগাঁও আফতাব বিবি বাজারে একটি করাতকলের সামনে থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত বাদশা ওই ইউনিয়নের মধুয়াই গ্রামের ব্যাপারী বাড়ির আবুল খায়েরের ছেলে।

এর আগে, সোমবার রাতে ফেনী শহরের পৌরসভা সংলগ্ন স্থানে জাফর আহাম্মদ (৫০) নামে এক অটোরিকশা চালককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শহরের নাজির রোডে একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করতেন সে। নিহতের বাড়ি সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের ফতেহপুর এলাকায় বলে জানা গেছে।

ইএইচ