বরগুনায় হামলা-লুটপাটে পথে নেমেছে একাধিক ব্যবসায়ী

বরগুনা প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২৪, ০২:০৪ পিএম

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতাদের অফিস, বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বরগুনায় হামলা, ভাঙচুর, দখল, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের স্বীকার হয়েছে সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

এক রাতের ব্যবধানে সব হারিয়ে স্বাবলম্বী থেকে পথে নেমে বসেছে একাধিক ব্যবসায়ী। অনেকে দিশেহারা হয়ে ঘুরছেন পথে পথে। বিচারের জায়গা না পেয়ে হতাশ তারা। প্রশাসনের আশ্বাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সকল অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা হবে।

শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর একদল দুষ্কৃতকারী ছয় উপজেলায় ইউনিয়ন ওয়ার্ড বলার হাট বাজারগুলোতে চালিয়েছেন পরিকল্পিত ভাবে লুটপাট ও দখল বাণিজ্য বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করেছেন তারা।

(অরাজনৈতিক) ব্যবসায়ীদের দোকানে হামলা চালিয়ে লুটপাট করেছে লাখ লাখ টাকার মালামাল। এতে সব হারিয়ে এখন পথে বসেছে একাধিক ব্যবসায়ী। ছাত্রদের আন্দোলনের ফাঁকে নির্বাচনি ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ফায়দা লুটেজে দুর্বৃত্তরা।

জেলার তালতলী উপজেলার নিউপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী মো. জলিল রাঁড়ি। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছিলেন ইট, বালু এবং রড সিমেন্টের। এতে অনেকটা স্বাবলম্বীও হয়েছেন জলিল। কিন্তু শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে স্থানীয় একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। টাকা দিতে অস্বীকার করায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। লুট করা হয় প্রায় ৫০ লাখ টাকার মালামাল। এতে সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব জলিল রাঁড়ি। একই সময় হামলা ও লুট করা হয়েছে তার ভাই ইউনুচ রাড়ির আইসক্রিম ফ্যাক্টরিতেও।

এমন অভিযোগের বিচার চেয়ে গত ১০ আগস্ট বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন জলিল রাঁড়ি। অন্যদিকে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০ থেকে ৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বরগুনা দ্রুত বিচার আদালতে রোববার মামলা দায়ের করেছেন জলিল। আদালতের বিচারক এম শরিয়াত উল্লাহ্ মামলাটি আমলে নিয়ে তালতলী থানাকে এজাহারের নির্দেশ দেন।

মামলার আসামিরা হলেন, তালতলী উপজেলার পশ্চিম ঝাড়াখালী এলাকার বারেক হাওলাদার, সলেমান হাং, এনায়েত হাং, নাহিদ হাং, তৈয়ব হাং, তালেব হাং, সালেক হাং, মো. আশ্রাফুল, জাকির মোল্লা, সাগর মৃধা, রাসেল হাওলাদার।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত এনায়েত হাওলাদার বলেন, আমি যুবদলের কর্মী। এ ঘটনার সাথে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নাই। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নিজস্ব দলীয় কোন্দলের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি এ বিষয়ে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার দাবি করেন।

জলিলের মতো একই উপজেলার পঁচাকোড়ালিয়া সুইচগেট বাজারে মুদি-মনোহরি ব্যবসা করে আসছিলেন সাধারণ ব্যবসায়ী আশ্রাব আলী। যার নেই কোন রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা। তিনি ব্যবসা করে অনেকটা স্বাবলম্বী ছিলেন। কিন্তু একইদিনে হামলা ও লুটপাট হয় আশ্রাবের দোকানে। এতে হিরো থেকে জিরো হয়ে পথে বসেছেন আশ্রাব। তার দোকানের প্রায় ৬০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়াও তালতলীর পঁচাকোড়ালীয়া সুইচগেট বাজার, কচুপাত্রা বাজার, আমতলীর গাজীপুরা বাজারসহ জেলার বিভিন্ন হাট বাজারের দোকান ঘর দখল করে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা আমার সংবাদকে বলেন, চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিরোধিতাকারীরাই এই লুটপাট অগ্নিসন্ত্রাসের সাথে জড়িত প্রয়োগকারীদের কাছে আমরা বলেছি যারা এই অপরাধের সাথে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

এ বিষয়ে আশ্রাব আলী বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসীরা আমার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি ওই টাকা দিতে অপারগতা স্বীকার করায় তারা আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে। আমি তাদের চিনলেও নাম বলতে পারছিনা। তাহলে আমি এবং আমার পরিবারের জীবনের ওপর হুমকি চলে আসবে। তিনি আরও বলেন, প্রশাসন গোপন ভাবে তদন্ত করলে আসামিদের নাম জানতে পারবে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং লুট হওয়া মালামাল ফেরত পেতে চাই।

জলিল, আশ্রাব এবং ইউনুচের মতো হামলা ও লুটপাটের শিকার জেলার একাধিক ব্যবসায়ী। এখনো আতঙ্কে দিন কাটছে অনেকের। তাই ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তায় প্রশাসনের কঠোর নজরদারি রাখার দাবি তাদের।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে। তবে জেলায় কতজন ব্যবসায়ী এবং কি পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার এখনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।

ইএইচ