মহেশপুরে এডিপি প্রকল্পে অনিয়ম

কাজ না করেই অর্থ আত্মসাৎ, ব্রিজের বরাদ্দে কালভার্ট নির্মাণ

মহেশপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৪, ০৪:১৩ পিএম

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ না করেই কাগজে কলমে শতভাগ বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে।

এছাড়া রয়েছে প্রকল্পের প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ না করা, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারকরাসহ নানা অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ।

উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, প্রতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। বরাদ্দকৃত প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মাধ্যমে।

৩০ জুনের মধ্যে সকল প্রকল্পগুলো শেষ হয়। প্রকল্পগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, স্কুলে বেঞ্চ প্রদান ও স্কুলের উন্নয়ন, সেলাই মেশিন ও নলকূপ বিতরণ, কালভার্ট নির্মাণ, ড্রেন নির্মাণ, শৌচাগার তৈরি করে দেওয়া এবং রাস্তা ফ্ল্যাটসলিং করণ।
তথ্য প্রযুক্তি আইনে আবেদন করে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, একই প্রকল্প ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন অর্থবছরে দেওয়া হয়েছে। কোনটির নামে মাত্র কাজ হয়েছে আবার কোনটির অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি।  ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপির উন্নয়ন তহবিলে উপজেলার নাটিমা ইউনিয়নের নাটিমা গ্রাম থেকে রুপদাহ অভিমুখে রুপাদহ মাঠে মগরেব আলীর জমির পাশের রাস্তায় ১টি ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

২০২২-২০২৩ অর্থবছরের তালিকায়ও নাটিমা ইউনিয়নের নাটিমা গ্রাম থেকে রুপদাহ অভিমুখে রুপাদহ মাঠে মগরেব আলীর জমির পাশের রাস্তায় ১টি ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু একই প্রকল্প দুইঅর্থ বছরে দিয়েও ব্রিজ নির্মাণ না করে নানা অনিয়মে একটি কালভার্ট নির্মাণ করে প্রকল্পের ৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এছাড়াও ২০২১-২০২২ ও ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে আদমপুর মল্লিকপাড়া তরিকুলের বাড়ি থেকে বক্তারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তাফ্ল্যাট সলিং প্রকল্পে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও তার কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন তহবিলের ১ লাখ টাকা দিয়ে রাস্তাটি ফ্ল্যাটসলিং করে দিয়েছি। তা ছাড়া কোন অর্থ বছরে এ রাস্তায় কোন কাজ হয়নি।

সরেজমিনে প্রকল্প স্থানে গিয়ে দেখা যায় ৪ লাখ টাকা বরাদ্দে ব্রিজ নির্মাণের পরিবর্তে নির্মাণ করা হয়েছে কালভার্ট বা ইউড্রেন। কথা হয় পাশের জমির মালিক মজেহার ও আলমগীরের সাথে।

তারা বলেন— চার-পাঁচ মাস আগে এই কালভার্টটি নির্মাণ হয়েছে। নিম্নমানের ইট, বালু-খোঁয়া আর কোনরকম গাঁথুনি ওপর স্লাব বসিয়ে দিয়ে কালভার্টটি তৈরির কাজ শেষ করা হয়েছে। আমরা প্রতিবাদ করলে তারা বলেন যেভাবে করার কথা আমরা সেভাবে করেছি, আমাদের কথার কোন পাত্তা দিতো না।

তারা আরও বলেন- আমাদের চেয়ারম্যান কাশেম মাস্টারকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তিনি বলেন যেভাবে করার নিয়ম তারা তো সে ভাবেই করবে, আপনারা শুধু দেখেন কাজটি হচ্ছে কিনা।

উজ্জ্বল ও ইন্তাদুল বলেন, মাঠের পানি নিষ্কাশনের জন্য ৪-৫ মাস আগে ব্রিজের পরিবর্তে ৫০-৬০ হাজার টাকার কালভার্ট পেয়েছি, এটা দিয়ে মাঠের পানি বের হবে কীভাবে? পানির চাপ তো কালভার্ট নিতে পারবে না, এক বর্ষা পার হলেই নিচের মাটি সরে গিয়ে কালভার্ট ভেঙে পড়বে। সিমেন্টের পরিমাণ কম দেওয়ায় গরুর গাড়ির চাকা উঠলেই এখনিই উঠে যাচ্ছে ঢালাইয়ের খোয়া।

উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ শাহারিয়ার আকাশ জানান, গত দুই তিন বছর আগের প্রকল্প, টাকাও ছাড় হয়ে গেছে অনিয়ম হলেও এখন কিছু করার নাই।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ময়জদ্দীন হামিদ বলেন, আমরা শুধু প্রকল্প অনুমোদন করে দেই, বাকি সব কাজ করে ইঞ্জিনিয়ার অফিস। কোন প্রকল্প অনিয়ম হলে কেউ অভিযোগ দিলে সেটা আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।

ইএইচ