কুমিল্লায় ভয়াবহ বন্যা

নাঙ্গলকোট-মনোহরগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকায় যাচ্ছে না ত্রাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২৪, ১২:৫৫ পিএম

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে কুমিল্লা। জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলাই বানের পানিতে নিমজ্জিত। পানিবন্দি লাখো মানুষ। এসব উপজেলার মধ্যে সারাদেশ থেকে ত্রাণ ও উদ্ধার কর্মীরা দাউদকান্দি, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া এলাকায় বেশি প্রবেশ করছেন। ত্রাণ পাচ্ছেন না পানিবন্দি নাঙ্গলকোট, লাকসামের কিছু এলাকা ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার লাখ লাখ পানিবন্দি মানুষ।

সোমবার (২৬ আগস্ট) সকালে এমন অভিযোগ করেছেন সে সব উপজেলার বানভাসি মানুষেরা।

তাদের অভিযোগ প্রচার-প্রচারণা কম থাকায় ব্যক্তি ও সংগঠন কেন্দ্রীক ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ করা বাইরের স্বেচ্ছাসেবকরা একদম আসছেন না।

উপজেলা তিনটির মধ্যে নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা একেবারেই নোয়াখালীর পাশে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যারাই ত্রাণ সহায়তা নিয়ে কুমিল্লায় আসছেন, তাদের সবাই কাছাকাছি অঞ্চল বুড়িচং বা আশপাশের উপজেলাগুলোতে প্রবেশ করছেন। মহাসড়ক থেকে দূরের উপজেলা হওয়ায় সেখানের বানভাসিদের কাছে যাচ্ছেন না কেউ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল তুলনা মূলক নিচু। বানের পানি জমা হতে থাকছে এ অঞ্চলগুলোতে। এতে করে উপজেলার  বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। গোমতীর বাদ ভাঙন, ডাকাতিয়া নদীর পানি বৃদ্ধি  ও বৃষ্টিপাতে প্রতিদিন পানি ১০ থেকে ২০ সে.মি করে বাড়ছে এ অঞ্চলগুলোতে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে– আদ্রা উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নের পাশের গ্রামগুলো: আদ্রা, ভোলাইন, কাকৈরতলা, আটিয়াবাড়ি,  চাটিতলা, পুজকরা, মগুয়া, পদুয়া, তুগুরিয়া,  নোয়াপাড়া, বেলঘর ও মেরকটসহ পাশ্ববর্তী অঞ্চলগুলো। 

এ গ্রামগুলোতে ঘরে ঘরে পানি ঢুকে আছে, এতে করে প্রায় ৮০০০ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। তাদের বেশিরভাগ লোকই কৃষি ও খামারের উপর জীবন নির্বাহ করে। বানের পানিতে সব কিছু ধবংস হয়ে যায়। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, সংবাদ মাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা কম থাকায় ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এসব এলাকার মানুষ।

গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করার খবরে বুড়িচং উপজেলার প্লাবনের খবর বেশি প্রচার হওয়ায় সারাদেশ থেকে দলে দলে নৌকা ও ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে প্রবেশ করছেন সেখানেই। কিন্তু ডাকাতিয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্লাবিত হয়েছে জেলার দক্ষিণের তিন উপজেলা। এসব এলাকায় অন্তত আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি আছেন। সরকারি ত্রাণ সেসব মানুষদের জন্য খুবই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন সেসব এলাকার বানভাসিরা।

আনোয়ার হোসেন নামের নাঙ্গলকোট উপজেলার কাকৈরতলা গ্রামের এক বানভাসি বলেন, আমাদের নাঙ্গলকোট আদ্রা দক্ষিণ ইউনিয়ন দুর্গম এলাকা হওয়ায় এখানে কোনো সাংবাদিকও আসেন না। আমরা যে পানিতে তলিয়ে আছি, আমাদের খবরগুলো প্রচার করেন না। আমাদের এদিকে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানির খুব প্রয়োজন। সরকারি সহায়তা আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়।

জসিম উদ্দিন নামের তুগুরিয়া গ্রামের আরও এক বানভাসি বলেন, আমাদের এখানে (নাঙ্গলকোট) শুধু পানি আর পানি। অনেক অসুস্থ মানুষ, বৃদ্ধ মানুষ, গর্ভবতী নারীও আটকে আছে তাদের উদ্ধার করা খুব দরকার। ত্রাণ সহায়তারও প্রয়োজন। দেশের মানুষদের আমাদের গ্রাম ও আশেপাশের গ্রামগুলোর দিকে একটু মনযোগ দেওয়ারও অনুরোধ করব।

খন্দকার ইসমাঈল নামের মনোহরগঞ্জ উপজেলার এক বানভাসি বলেন, মনোহরগঞ্জের নিন্মাঞ্চলের মানুষ খুবই কষ্ট পাচ্ছে। পানিতে আটকা অনেক মানুষ। তাদের উদ্ধার করতে নৌকা ও পর্যাপ্ত খাবারের দরকার।

নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন— নাঙ্গলকোটে ত্রাণ সরবরাহে কিছুটা সংকট আছে আমরা সেটা স্বীকার করছি। এ উপজেলার কিছু জায়গায় একেবারেই পৌঁছানো যাচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে তাদের কাছে ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার্। বর্তমানে নাঙ্গলকোটে উদ্ধারের মতো পরিস্থিতি শুধু একটি জায়গায় আছে। সেখানে নৌকা ও স্পিডবোট পাঠিয়ে সে এলাকার লোকদের উদ্ধার করা হবে।

মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) উজালা রানী চাকমা বলেন, এখানে বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে। আজকে পানি কিছুটা বেড়েছে। মনোহরগঞ্জ উপজেলার অনেক দুর্গম এলাকা রয়েছে যেগুলোতে নৌকা ছাড়া যাওয়া একেবারেই অসম্ভব। আমাদের কাছে নৌকার প্রচুর সংকট রয়েছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে পাঠিয়ে সেসব এলাকায় ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি যেন একটা মানুষও অভুক্ত না থাকে।

বিআরইউ