দেড় বছর ধরে অভিভাবকহীন বরগুনা জেলা বিএনপি

বেলাল হোসেন মিলন, বরগুনা প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৪, ০৩:২১ পিএম

প্রায় দেড় বছর ধরে কমিটি নেই বরগুনা জেলা বিএনপির। এতে চলমান রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে অভিভাবকশূন্য বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা ও অস্থিরতা বিরাজ করছে।

দলটির কেন্দ্র ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন নিয়েও অন্ধকারে থাকছেন তারা। এ অবস্থায় দ্রুত জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের জন্য দাবি তুলেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

যদিও দলের চরম দুর্দিন ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জেলায় দলটির নেতৃত্ব দিয়ে উজ্জীবিত করার পাশাপাশি সংগঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক জেলা বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা।

তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি, চরম দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন নজরুল ইসলাম মোল্লা। তাই তাকে জেলা বিএনপির সভাপতি করে এবং জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন হাসান শাহিনকে সাধারণ সম্পাদক করে দ্রুত কমিটি গঠনের।

জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদ বাণিজ্যের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত বছরের ১৭ এপ্রিল বরগুনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

বিলুপ্ত ওই কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছিলেন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লা, যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছিলেন সালেহ মো. ফারুক, তালিমুল ইসলাম পলাশ। তাদের বিরুদ্ধে পদ বাণিজ্যের অভিযোগে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা সমাবেশ করেছেন ঐক্যবদ্ধভাবে। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল, নির্বাহী সদস্য আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে গত বছরের ৪ জানুয়ারি গঠিত তদন্ত কমিটি অর্থের বিনিময়ে দলীয় পদ বিক্রির অভিযোগের সত্যতা পায়।

পরে ওই বছরের মার্চে তারা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে দলটি। এরপর দলটির কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় দায়িত্বে থাকা নেতাদের দ্রুত জেলা বিএনপির কমিটি প্রদানের দায়িত্ব দেয়া হলেও তা এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।

এদিকে আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্তির পর প্রায় দেড় বছর অতিবাহিত হলেও এখন নতুন কমিটি না হওয়ায় দ্বিধাদ্বন্দ্বে তৃণমূল নেতাকর্মীরা। দলের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভক্তি নেতাকর্মীরা হয়ে পড়েছেন বিচ্ছিন্ন।

বিএনপি নেতারা জানান, হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। দলকে এখন সুসংগঠিত করার সময়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করে সংসদ নির্বাচন দেবেন। এখনই যদি কমিটি গঠন করে দলকে সুসংগঠিত না করা যায় তাহলে নির্বাচনে আমরা পিছিয়ে থাকবো।

তারা জানান, দল নেতৃত্ব শূন্য থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সকল আন্দোলন সংগ্রামে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম মোল্লার নেতৃত্বে আন্দোলন চলেছে বরগুনায়। দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্বশূন্য থাকার কারণে জেলা বিএনপিসহ জেলার ৬ উপজেলায় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।

বামনা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ রানা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী কমিটি বিলুপ্তির পর নতুন কমিটি ঘোষণার সময় পেরিয়েছে অনেক আগেই। জেলা বিএনপির নেতৃত্ব দেওয়ার কোন আভাস আমরা তৃণমূল নেতাকর্মীরা পাচ্ছি না। নেতৃত্ব শূন্য অবস্থায় প্রায় দেড়বছর চলছে বরগুনা জেলা বিএনপি। আমরা বুঝতে পারছি না জেলা বিএনপি নেতৃত্ব শূন্য অবস্থায় কেন্দ্রের ঘোষিত সকল কর্মসূচি বাস্তবায়নে জন্য নজরুল মোল্লা,হুমায়ুন হাসান শাহীন, ফজলুল হক মাস্টার, শফিকুজ্জামান মাহফুজ অ্যাডভোকেট নুরুল আমিনসহ একাধিক নেতারা মাঠে ছিলেন সবসময়।

বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, বরগুনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেনসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের তদন্ত করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। তারা আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়ায় কেন্দ্রীয় বিএনপি বরগুনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করেছেন। এরপর নতুন করে কমিটি গঠনের বিষয় নিয়ে এখনো কিছুই জানানো হয়নি।

ইএইচ