এখন আমার আর মেয়ের দায়িত্ব কে নেবে?

রাজশাহী ব্যুরো প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৪, ১২:৩১ এএম

মায়ের সাথে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এসেছিল চারদিনের শিশু। কয়েকদিন আগে পৃথিবীর মুখ দেখা এই শিশুর বাবা গণপিটুনি নিহত হয়েছেন। এমন মৃত্যুর পর এতিম নবজাতক ও স্ত্রী অমানিশার ঘোর অন্ধকারে পড়েছেন।

নিহত মাসুদের স্ত্রী বিউটি আরা গভীর রাতে তার মৃত্যুর খবর শুনে মুষড়ে পড়েন। চারদিনের এই শিশু সন্তান নিয়ে পড়েছেন অথই দুঃখের সাগরে। শোকে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে তার।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে বসেছিল আবদুল্লাহ আল মাসুদের স্ত্রী বিউটি আরা। সাথে ছিল চারদিনের শিশুকন্যা। এই কন্যার এখনও কোনো নাম ঠিক করেনি এই দম্পতি। আকিকা দেওয়ার কথা ছিল। তাও দেওয়া হয়নি। মাসুদের সাথে নাম মিলিয়ে মাসুমা রাখতে চেয়েছিলেন এই দম্পতি।

মাসুদের স্ত্রী বিউটি জানান, ‘বৃহস্পতিবার মিশন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছি। এরপর সোজা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে গিয়ে উঠি। নিজে অসুস্থ থাকার কারণে সংসারের কাজকর্মও ঠিকভাবে করা যাচ্ছিল না। মাসুদ বিকালে বের হয়েছে ওষুধ কেনার জন্য। সে যে গেল এখনও আর ফিরে এলো না।’  

তিনি বলেন, ‘দেড় বছর আগে দুই পরিবারের অমতে আমরা বিয়ে করেছিলাম। আমাদের পরিবারের কেউ মেনে নেয়নি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে থাকতাম। মাসুদ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করার জন্য কোয়ার্টার পেয়েছিল। মাসুদ নিজেও অসুস্থ ছিলেন। ১০ বছর থেকে তিনি স্বাভাবিক জীবনযাপনে ছিলেন না। কৃত্রিম পা লাগিয়ে চলাফেরা করতেন। মাসুদের কি দোষ ছিল? সে তো আন্দোলনের সময় অফিসে যেত অফিস শেষ হলে বাসায় ফিরে আসতো। ছাত্রলীগ ছেড়েছে বহু আগেই।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিউটি বলেন, ‘এখন আমার আর মেয়ের দায়িত্বকে নেবে?’ রোববার বিকালে ময়নাতদন্ত শেষ হয় মাসুদের। এরপর তার গ্রামের বাড়ি শিবগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে দাফন করা হবে।

শনিবার বিকেলে রাজশাহী মহানগরীর বিনোদপুর এলাকায় গণপিটুনি খান সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদ। রাত একটার দিকে তিনি রামেক হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে মারা যান। আবদুল্লাহ আল মাসুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য।

জানা গেছে, শনিবার রাতে নবজাতক শিশুর জন্য ওষুধ কিনতে গিয়ে নগরীর বিনোদপুর এলাকায় তার ওপর দুর্বৃত্তরা হামলা করে। পরে মতিহার ও বোয়ালিয়া থানায় নেবার পর অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেলে নেয়া হয় মাসুদকে। সেখানেই গভীর রাতে মারা যান তিনি।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. শংকর বিশ্বাস জানান, রাত পৌনে ১১টার দিকে তারা অসুস্থ অবস্থায় মাসুদকে পেয়েছেন। মৃত্যুর কারণ হিসেবে আপাতত মনে করা হচ্ছে শরীরে বিভিন্ন স্থানে জখম এবং অসুস্থতা ও গণপিটুনির কারণেই হতে পারে। তবে বিস্তারিত জানতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, নিহতের পরিবার থেকে মামলা হলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মানুষ যাতে করে এই ভাবে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয় তার জন্য দ্রুত ছাত্র-জনতার সঙ্গে বসে বিষয়গুলো নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা হবে।

ইএইচ