ফেনীতে দু’পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত ২০

ফেনী জেলা প্রতিনিধি: প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪, ০৫:৩৪ পিএম

ফেনীতে বিএনপির দু’পক্ষের  সংঘর্ষে ১৬-১৭ জন ও পৃথক স্থানে আওয়মী লীগ ক্যাডারদের হামলায় আরও ৩-৪ জনসহ   ছাত্রদল-যুবদল ও শ্রমিক দলের অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলার দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের সাপুয়া গ্রামে ও বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের মধুগ্রাম ও সুবার বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলের দিকে পরশুরাম উপজেলার ওই ইউনিয়নের মধুগ্রামে উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবিএম দাউদের সভাপতিত্বে উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আবছারের তত্ত্বাবধানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর ব্যানারে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয়।

এ সময় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সেলিম সরকারের কয়েকজন অনুসারী অনুষ্ঠানে স্থলে এসে  হামলা চালায়। এতে ইউনিয়ন যুবদল ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মধ্যে ইমন, আইয়ুব, রাব্বি, শাহাদাত, লিমনসহ ৫ জন আহত হন।

পরে সন্ধ্যায় এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুবার বাজার এলাকায় ওই দুপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে সেলিম সরকার গ্রুপের শাহীন, দিদার, আবুল হাশেম, রনি, আল আমিন, মোবারক, রাজন, সোহেলসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন।

এ প্রসঙ্গে পরশুরাম উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আবছার বলেন, ফেনী-১ আসনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক রফিকুল আলম মজনুর পক্ষ থেকে আমার তত্ত্বাবধানে একটি ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠান চলছিল।

এ বিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সবাইকে আগেই অবগত করা হয়েছিল। তবুও অনুষ্ঠান চলাকালে হঠাৎ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সেলিম সরকারের একদল অনুসারী এসে হামলা করে। তখন তারা অনুষ্ঠানস্থলে রফিকুল আলম মজনুর ব্যানার ছিঁড়ে, চেয়ার ভাংচুরসহ নেতাকর্মীদের পিটিয়ে আহত করেন। এতে আরিফ আরিফ, আইয়ুব, ইমন, শাহাদাতসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মধুগ্রাম থেকে এ ঘটনার সূত্রপাত হলেও পরবর্তীতে সন্ধ্যায় সুবার বাজারে তারা আবারও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। ঘটনার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন নেতাদের জানানো হয়েছে।তার দাবি  শান্তিপূর্ণ আয়োজনকে বিতর্কিত করার জন্য ওই পক্ষটি ন্যাক্কারজনক এ হামলা চালিয়েছে।  
অভিযোগ প্রসঙ্গে পরশুরাম উপজেলা বিএনপি সদস্য ও মির্জানগর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সেলিম সরকার  বলেন, যাদেরকে আমার অনুসারী বলে অভিযোগ করা হচ্ছে, তারা এ হামলার ঘটনায় কোনোভাবেই জড়িত নয়। সেখানে মূলত ত্রাণ নিতে আসা লোকজন ত্রাণ না পেয়ে ঝামেলা করেছে। পরে আমার অনুসারীদের মধ্যে বাবুল মেম্বারের দুই ছেলে ও ভাতিজাকে বাজারে আসার পথে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শামীমের নেতৃত্বে বহিরাগতদের নিয়ে এসে সাপের মতো পিটানো হয়েছে।তিনি বলেন,এখানে আমার অনুসারী বলে হামলার যে অভিযোগ উঠেছে তা সত্য নয়।

এ ব্যাপার পরশুরাম উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল হালিম  বলেন, ঘটনাটি তিনি অবগত হয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকসহ কয়েকজনকে মীমাংসা করে দেওয়ার জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন। এ ঘটনায় দুপক্ষের আহতদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে দলের  লোকজন দেখতে গিয়েছিল।তিনি জানান, মূলত ওই ওয়ার্ডে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে একপক্ষকে না জানানোর কারণে মান-অভিমান থেকে অপর পক্ষ এ ঘটনা ঘটিয়েছে।  

পরশুরাম মডেল থানা পুলিশের ওসি শাহাদাত হোসেন  বলেন, দু‍‍`পক্ষের সংঘর্ষের বিষয়ে তিনি  শুনেছেন। তবে এ বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেনি।

অপরদিকে,শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে জেলার দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের সাপুয়া এলাকায় আ‍‍`লীগ ক্যাডারদের হামলায় বিএনপি-শ্রমিকদলের ৩-৪ জন কর্মী আহত হয়েছে।

এদের মধ্যে ,একই গ্রামের ফজল হকের ছেলে শিমুল (২৫),আবুল হাশেম সবুজের ছেলে আলী ইমাম সৌরভ (২০) ও আবদুস সোবহানের ছেলে মো.সুজন(২২)‍‍`র নাম জানা গেছে।আহতরা স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে।

পরে এ ঘটনা জড়িত ৭ জনের নাম উল্লেখ করে তাদের পক্ষ থেকে অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জন সহ ১২ জনের নামে দাগনভূঞা থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

দাগনভূঞা থানার ওসি (তদন্ত) রাসেল মিয়া অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,ঘটনাটি যতদ্রুত সম্ভব তদন্ত পূর্বক যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

বিআরইউ