তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ড: নির্দেশদাতা ছিলেন ভাবি শরীফা আক্তার

বেলাল হোসেন মিলন, বরগুনা প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪, ১১:০৫ এএম

প্রেমিকার অভিভাবক দ্বারা প্রতিনিয়ত লাঞ্ছনা-বঞ্চনা-অপমান, মা-বাবা ও ভাইকে হারানোর পর মানসিক ভারসাম্যহীন মাসুদ কামাল তোফাজ্জলের ভাবি শরীফা আক্তারই ছিল তার একমাত্র আশ্রয়স্থল।

শুধুমাত্র সম্পত্তির একচ্ছত্র মালিক হওয়ার লোভে সেই ভাবিই তোফাজ্জলের সঙ্গে করেছেন কুকুর বিড়ালে মতো আচরণ। তোফাজ্জল সুস্থ থাকুক সেটাও কখনও চাননি তিনি।

এমনকি মোবাইল চুরির অপবাদের বিচার ছাত্রদেরকেই করতে বলেন ভাবি শরীফা। এমন সব অভিযোগ লিখে নিহত মাসুদ কামাল তোফাজ্জলের মামাতো বোন আসমা আক্তার তানিয়া তার নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্ট করেন। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং শরীফার প্রতি মানুষের ঘৃণা, ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় ওঠে।

তোফাজ্জলকে মর্মান্তিকভাবে পিটিয়ে হত্যার পর এ সব তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পাড়ালে বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানান আলোচনা ও সমালোচনার।

তানিয়া তালুকাদার নামের ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্ট দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন তোফাজ্জলের মামাতো বোন আসমা আক্তার তানিয়া।

তানিয়া তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, তোফাজ্জেল আমার ফুফাতো ভাই ছাড়াও দুধ ভাই (আমরা একই মায়ের দুধ খেয়ে আমরা বড় হইছি)। তোফাজ্জেলকে যারা মেরে ফেলেছে তারা তো অবশ্যই খুনি ! কিন্তু আমার মতে তোফাজ্জেলের আরও দুজন খুনি অপরাধীর নামের খাতা থেকে বাদ পরে গেছে, সেই দুইজন হলো ওর একমাত্র ভাবি এবং ভাইয়ের শাশুড়ি। তোফাজ্জেলের পরিবারের শেষ আশ্রয়স্থল ছিল ওর একমাত্র ভাবি, যে কিনা ওর সাথে কুকুর বিড়ালে মতো আচরণ করতো !! তোফাজ্জেল সুস্থ হোক সে সেটা কখনোই চায় নাই, কেন চায় নাই জানেন? কারণ তোফাজ্জেল সুস্থ হলে সমস্ত সম্পত্তিতে ভাগ বসাবে !! 
তিনি তার পোস্টে আরও লেখেন, তোফাজ্জেলকে যখন ফজলুল হক হলের ছাত্ররা অত্যাচার করতে ছিল, তখন অভাগাটা, নিরুপায় হয়ে ভাবিকেই কল দিতে বলেছিলো, হয়তোবা ও ভেবেছিলো ভাবির মনটা আমার জন্য একটু হলেও কাঁদবে। ওর ভাবি ফোন পেয়ে কি করেছিলো জানেন? সে মোবাইল চোরের বিচার ছাত্রদেরকেই করতে বলেছিলো এবং এটাও বলেছিলো যে, তাকে যেন এ ব্যাপারে আর ফোন দেয়া না হয়। এই বলে রাতে ফোনটা বন্ধ করে ঘুমিয়ে গিয়েছিল!!!

এছাড়াও তানিয়া আরও লেখেন, তোফাজ্জেলের মৃত্যুর পরে একমাত্র গার্ডিয়ান হিসেবে দাঁড়িয়েছে ওর একমাত্র ভাবি! সে মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিচ্ছে, কান্নার অভিনয় করছে, সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা সে নিচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও নিবে। আমার একটাই প্রশ্ন, সে কোন অধিকারে নিচ্ছে? যে তোফাজ্জেল জীবিত অবস্থা তার থেকে একটু ভালোবাসা পায় নাই, এখন আসছে গার্ডিয়ান হিসেবে। কেন একমাত্র গার্ডিয়ান হিসেবে দাড়িয়েছে জানেন? সে এখন তোফাজ্জেল মৃত্যুর বড় একটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ পেতে পারে!! ভাবি এইটুকু মাথায় রাখেন, আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না, তোফাজ্জেলের এই অবস্থা পিছনে আপনিও দায়ী।

আসমা আক্তারের পোস্ট করা এমন অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে নিহত তোফাজ্জলের ভাবি শরীফা আক্তার আমার সংবাদকে বলেন, তোফাজ্জল বেঁচে থাকলে বলতে পারতো কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা। তোফাজ্জল প্রায় তিন চার বছর আমার কাছেই ছিল। যখন কিছুটা সুস্থ ছিল তখন সে বিভিন্ন থানায় রাইটিং এর কাজ করেছে। পারিবারিকভাবে তোফাজ্জলের সাথে আমার কেমন সম্পর্ক ছিল তা মামাতো বোন দূরে বসে কীভাবে দেখবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে তোফাজ্জলের বিচার করতে বলেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে ওই শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোনে টাকা দাবি করে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন তারা। এ সময় আমি তাদেরকে বলি তোফাজ্জল মানসিক রোগী, সে কোনো চোর না তাকে ছেড়ে দিন। এছাড়াও তাদেরকে বলি যদি সে কোনো অপরাধ করে থাকে তাহলে আপনার আইনের আশ্রয় নেন।

জাকিয়া সুলতানা নামের এক ব্যক্তি তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেন, আজকে কয়েকদিন যাবৎ স্বাভাবিক নিয়মে ভাত খেতে পারি না। ভাত খেতে গেলেই কেমন যেন অস্বস্তি হয়। এত মায়াবী চোখ তথাকথিত মেধাবীদের মনে এতটুকু ও মায়ার জন্ম দিতে পারেনি। এরা মেধাবী হতে গিয়ে পশুতে পরিণত হয়ে গিয়েছিলো। মেধার প্রতিযোগিতায় মনুষ্যত্ববোধ এদের ভিতরে তৈরিই হয়নি কখনো। আমি শুধু ভাবি এদের পরিবারের কথা। কতই না গর্ব করেছিলো সন্তান সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে চান্স পেয়েছে বলে। তোফাজ্জল ভাইয়ের তো পৃথিবীতে কাঁদার মতো ও কেউ নাই। ওনার ফয়সালা তো হাশরের মাঠে হবে। কিন্তু এই মেধাবীদের তৈরি করতে তাদের পরিবারের কত ত্যাগ,শ্রম কষ্ট সব এক মুহূর্তে যেন বিলীন হয়ে গেল। এতগুলো পরিবার নিঃশেষ হয়ে গেল এক মুহূর্তেই। আসুন, সন্তানদের মেধাবী হওয়ার আগে মানুষ হওয়ার প্রতিযোগিতা করি। যাতে করে একটা পিঁপড়ে ও পা দিয়ে পিষে ফেলার আগে মনুষ্যত্ববোধ জেগে ওঠে।

উল্লেখ্য, গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে কয়েক দফায় তাকে মারধর করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তোফাজ্জলকে মৃত ঘোষণা করেন।

ইএইচ